,

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক, জমার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর

বাংলাদেশের সব সরকারি কর্মচারীর জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে সম্পদের বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রথমবারের জন্য এই নিয়ম চালু হলেও ভবিষ্যতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিবরণী দাখিল করতে হবে।

স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করার মূল উদ্দেশ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ভিত্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরকার আশা করছে, সম্পদ-বিবরণী জমা দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এই নিয়ম সকল ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য।

সম্পদ-বিবরণী জমা দেওয়ার সময়সীমা

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ৩০ নভেম্বর ২০২৪।

তবে পরবর্তী বছরগুলোতে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি অর্থবছরের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী জমা দিতে হবে।

নির্ধারিত ছকে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

এই ছক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

দাখিল প্রক্রিয়া ও কর্তৃপক্ষ

ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব) কর্মকর্তারা তাঁদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে বিবরণী জমা দেবেন।

অন্যদিকে, গেজেটেড এবং নন-গেজেটেড কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা (১০ম থেকে ২০তম গ্রেড) তাঁদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে বিবরণী জমা দেবেন।

জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়।

দাখিলকৃত দলিল আদালতের আদেশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রকাশযোগ্য নয়।

এমনকি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-ও সম্পদ-বিবরণীর তথ্য প্রকাশে প্রযোজ্য হবে না।

সম্পদ-বিবরণী জমা না দিলে শাস্তি

সরকারি কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী জমা না দিলে শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, সম্পদের বিবরণী জমা না দেওয়া, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, তথ্য গোপন করা বা সম্পদের অসঙ্গতি দেখা গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে দুই ধরনের শাস্তি আরোপ করা হতে পারে—লঘুদণ্ড এবং গুরুদণ্ড।

লঘুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং আর্থিক ক্ষতি আদায়।

গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে নিম্নপদে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং বরখাস্ত।

সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই কর্মচারীরা দেশের মোট কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর একটি ছোট অংশ।

সরকারের এই উদ্যোগ এই বৃহৎ সংখ্যক কর্মচারীর আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের পদক্ষেপ

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শুদ্ধাচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

সম্পদ-বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনাকে এ প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে জবাবদিহির একটি সংস্কৃতি তৈরি করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।

পরিবর্তনের সম্ভাবনা

সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী এই নিয়মাবলিতে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হতে পারে।

সরকারি কর্মচারীদের অর্থনৈতিক লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়মাবলির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়মটির সফল বাস্তবায়ন দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

দেশের জনগণও সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আস্থা ফিরে পাবে।

এই উদ্যোগ কার্যকর করতে সরকার এবং প্রশাসনের একত্রে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়তে পারেন