সরকারি ঋণ গত অর্থবছরে ১৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ ১৮.৩ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
রাজস্ব আহরণের দুর্বলতা ও মুদ্রার ঘাটতির মধ্যে এই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
মোট ঋণের মধ্যে ৫৫.৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং বাকি অংশ বিদেশি ঋণ।
গতকাল প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্রৈমাসিক ঋণ-বুলেটিন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এই ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৩৬.৩ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী এখনো নিরাপদ সীমায় রয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের সঙ্গে তুলনা করলে ঋণের মোট পরিমাণ উদ্বেগজনক।
রাজস্ব আহরণ দুর্বল, সুদ পরিশোধ বেড়েছে
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো মুদ্রার ঘাটতি।
সরকারের রাজস্ব আহরণ দুর্বল এবং সুদ পরিশোধের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিদেশি ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুদ পরিশোধ এবং বকেয়া বিল পরিশোধ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলস্বরূপ, সরকার কঠিন আর্থিক চাপে রয়েছে।
সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় গত অর্থবছরে সুদ পরিশোধে খরচ ২১ শতাংশ বেড়ে ১.১ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এটি জাতীয় বাজেটের এক-ষষ্ঠাংশের সমান।
বিদেশি সুদ পরিশোধ ৬০ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধ ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাজেট ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের চাপ
অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়েও উদ্বেগ কম নয়।
রাজস্ব বৃদ্ধির হার কম থাকায় উচ্চ সুদের হার এবং ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্বের তুলনায় সুদ পরিশোধের হার ছিল ১৭.৬ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ২২.৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কঠোর মুদ্রানীতি প্রয়োগ করায় ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের খরচ আরও বাড়ছে।
সাদা কাগজ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের এই উচ্চ খরচ রাজস্ব ব্যবহারের সুযোগ সংকুচিত করছে।
বিদেশি ঋণ ও সুদের চাপ
বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে মূলধন এবং সুদ পরিশোধের খরচ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বড় প্রকল্পগুলোর ঋণের মুলতুবি সময়সীমা শেষ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের পরিশোধের সময়সীমা ঘনিয়ে এসেছে।
এগুলো ছাড়াও ২১৩টি ঋণের ক্ষেত্রে শিগগিরই পরিশোধের তীব্র চাপ তৈরি হবে।
সাদা কাগজে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতীতে ঋণ গ্রহণে দায়িত্বহীনতা দেখিয়েছে।
বিদেশি ঋণের পাশাপাশি অনাদায়ী দায় সৃষ্টি করে আরও বড় আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে।
এনার্জি, পরিবহন এবং ব্যাংকিং খাতে এই ধরনের ঋণের নেতিবাচক প্রভাব বিশেষভাবে দৃশ্যমান।
ঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, সরকারের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য আরও সংকুচিত হতে পারে।
রাজস্ব আহরণের ঘাটতি এবং মুদ্রার ঘাটতির কারণে সুদ পরিশোধ এবং সামাজিক খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সাদা কাগজে বলা হয়েছে, ঋণ ব্যবস্থাপনায় মূল্য-মানের অনুপাত নিশ্চিত না হলে দেশ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে।