সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।
কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী আদেশের আওতায় নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব
প্রতিবেদনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
নিম্নকক্ষে প্রচলিত ব্যবস্থা বহাল রেখে ৪০০ সদস্যের সংসদ করার কথা বলা হয়েছে।
নতুন প্রস্তাবে ১০০ সংরক্ষিত আসনে নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।
তাদের নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটে হবে এবং সংরক্ষিত আসনে অন্য কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না।
উচ্চকক্ষের ১০৫ সদস্য নির্বাচিত হবেন দলীয় প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুসারে।
উচ্চকক্ষে বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রুপ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।
আগের মতো পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
ইলেক্টোরাল ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে কাজ করার বাধ্যবাধকতা কিছু ক্ষেত্রে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে রাষ্ট্রপতি আগের তুলনায় স্বাধীনভাবে কিছু ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
গণপরিষদ ও পুনর্লিখনের প্রস্তাব
সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গণপরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে নতুন করে সংবিধান পুনর্লিখন করার কথা বলা হয়েছে।
নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ সদস্যদের নির্বাচন করা হবে।
রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
পরবর্তী সংসদ এই নির্বাচনের বৈধতা দেবে।
সংবিধানের মূলনীতি ও মেয়াদ পরিবর্তন
প্রতিবেদনে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’কে নতুন মূলনীতি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের মেয়াদ এক বছর কমিয়ে চার বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংসদের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সদস্যপদ হারানোর বিধান শিথিল করার কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ কতবার দায়িত্ব পালন করা যাবে, তা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না, এমন বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্ব
সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন।
বিপ্লবপন্থী দলগুলোকে একমত হতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৯০ সালের মতো রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানালেও অন্যান্য দল সংস্কার সম্পন্ন করার পক্ষে।
ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনকে আদর্শ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সংস্কার কমিশনের অন্যান্য প্রতিবেদন
সংবিধান সংস্কার ছাড়াও নির্বাচনব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
পুলিশ, বিচারব্যবস্থা ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন মাসের শেষে জমা পড়বে।
প্রতিটি কমিশনের সুপারিশ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তাবিত।
সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলে সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।