বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং জনগণকে সচেতন করে পাশে রাখতে হবে।
ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই কর্মশালায় তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক নেতা-কর্মী গুম ও খুন হয়েছেন।
এই অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক পরিবেশ তৈরি সম্ভব নয়।
তারেক রহমান মন্তব্য করেন, একটি পরিবারের মতো দেশেও জবাবদিহি জরুরি।
তিনি বলেন, “পরিবারে জবাবদিহি না থাকলে যেমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তেমনি দেশের জন্যও জবাবদিহি জরুরি।”
রুগ্ণ রাজনীতি ও অর্থনীতি
তারেক রহমান আরও বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতির রুগ্ণতা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
তিনি বলেন, “রাজনীতির রুগ্ণতার কারণেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার এবং প্রশাসনেও দুর্নীতি ও অদক্ষতা বাড়ছে।”
তার মতে, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
গত ১৫ বছরে সরকারের অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “নিশি রাতে ভোট, গুম-খুন, এবং কোটি কোটি টাকার পাচার—সবই জবাবদিহির অভাবের কারণে ঘটেছে।”
তিনি মনে করেন, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের প্রস্তাবিত ৩১ দফা সংস্কারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, “যখন কেউ এ বিষয়ে চিন্তাও করেনি, তখন বিএনপি ২৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছিল। পরে এটি ৩১ দফায় উন্নীত করা হয়েছে।”
তার মতে, বিএনপির এই প্রস্তাবই প্রমাণ করে যে দলটি দেশ ও জনগণের কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
তিনি নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, জনগণের দোরগোড়ায় এই ৩১ দফা প্রস্তাব পৌঁছে দিতে।
তিনি আরও বলেন, “জনগণের চাওয়ায় চলতে পারলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে।”
ষড়যন্ত্র ও জনগণের ভূমিকা
তারেক রহমান মন্তব্য করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত খবরগুলো থেকে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
তিনি নেতা-কর্মীদের জনগণকে সচেতন করতে এবং জনগণের পাশে থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, “যেকোনো মূল্যে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির সরকার গঠন সম্ভব।
তবে এজন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা
কর্মশালার প্রথম দিনে ঢাকা বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
বক্তারা দেশের রাজনৈতিক সংকট, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়।
এই পরিবর্তন আনতে হলে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থাকতে হবে।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা যদি গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের পাশে থাকবে।”
তিনি বলেন, “নতুন দিনের বাংলাদেশ গঠনে বিএনপি প্রস্তুত।
জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
এই কর্মশালা বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি স্তরে নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষিত ও সুসংগঠিত করার প্রচেষ্টা।
বিএনপির দাবি, তাদের প্রস্তাবিত সংস্কার ও পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।