শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
বিএনপি এবার নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রণয়ন করছে।
শীর্ষ নেতাদের মূল মনোযোগ আগামী ভোটের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের দিকে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনের অনিশ্চয়তা
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে থেকেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
তবে নির্বাচনের তারিখ ও প্রক্রিয়া এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করছে।
বিএনপি মনে করছে, এবার তাদের জন্য পরিস্থিতি তুলনামূলক অনুকূল।
তবে দলটি সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষত, নির্বাচনের সময় এবং পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য প্রতিকূলতা মাথায় রেখেই দলের কৌশল নির্ধারণ হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “বর্তমান অস্থির পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
ভারত ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিএনপির অন্যতম বিবেচ্য বিষয় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান।
দলটির নেতারা মনে করেন, ভারত আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাইবে।
তবে ভারতের মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা কী হবে, সেটিও বিএনপির পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিএনপি মনে করছে, ড. ইউনূস নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করার চেষ্টায় থাকবেন।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ পরিস্থিতি জটিল করতে পারে।
জামায়াত ও নতুন রাজনৈতিক শক্তি
বিএনপির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক।
দলের অনেক নেতাই মনে করেন, এবারের নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট সম্ভব হবে না।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিএনপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিএনপির মনোনয়ন না পেলে স্থানীয় জনপ্রিয় নেতারা ওই প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সংগঠনের পুনর্গঠন ও প্রস্তুতি
বিএনপি দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সারা দেশে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠন ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
দলের ৯ জন সিনিয়র নেতাকে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি বিভাগে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন ও কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমেদ আজম খান বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করব।”
তিনি জানান, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত সব স্তরের কমিটি গঠন হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।
ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান রিপন জানান, স্থানীয় কমিটিগুলোতে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা
বিএনপি মনে করে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তারা আশা করছে, আগামী নির্বাচনেও সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
তবে দলটি সতর্ক রয়েছে যে, সেনাবাহিনীর ভূমিকা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে।
দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “সেনাবাহিনী কী ভূমিকা পালন করবে, তা আমাদের কৌশলে বড় ভূমিকা রাখবে।”
নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি তাদের কৌশলকে বহুমুখী করেছে। দলীয় সংগঠন মজবুত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিটি দিক পর্যবেক্ষণ করছে।