শেখ হাসিনা
, ,

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা: মামলা সংখ্যা ছাড়ালো ২৫০

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ২৫৩-এ পৌঁছেছে।

এর মধ্যে ২১৩টি মামলা সরাসরি হত্যা এবং বাকিগুলো হত্যাচেষ্টা ও অপহরণ সংক্রান্ত।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এসব মামলা দেশের বিভিন্ন থানায় ও আদালতে দায়ের হয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব মামলা দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

নতুন করে দায়ের হওয়া ১৪টি মামলা আলোচনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক মামলা: অভিযোগের বিবরণ

গত ৫ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন ১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রতিটি মামলাই মূলত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে দায়ের হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে মো. রুমন নামে এক তরুণকে হত্যা করা হয়।

এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রগতি সরণির বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের সামনে আবুজর শেখ নামে এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এই ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অন্যান্য মামলার মধ্যে রয়েছে কিশোর সুলাইমানকে হত্যাচেষ্টা (যাত্রাবাড়ী), গাড়িচালক ইনছান আলীকে হত্যাচেষ্টা (মোহাম্মদপুর), এবং ব্যবসায়ী সামছুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগ (চানখাঁরপুল)।

প্রতিটি মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্র-জনতার মিছিলে শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল।

হত্যা মামলার সংখ্যা ২১৩

বর্তমানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ২১৩টি সরাসরি হত্যার অভিযোগ।

বাকিগুলো মূলত হত্যাচেষ্টা ও অপহরণ সম্পর্কিত।

প্রতিটি মামলাই অভিযোগ করছে যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারি বাহিনী ও রাজনৈতিক কর্মীরা সহিংস পদক্ষেপ নিয়েছিল।

গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে এক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, খবর সংগ্রহের সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাকে গুলি করেন।

এছাড়া রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারা, মিরপুর, এবং হাতিরঝিল এলাকাতেও হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি

শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তাদের সংখ্যা অন্তত ৯০ জন।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গঠিত তদন্ত কমিশন অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখছে।

গুম ও খুন সম্পর্কিত এক কমিশনের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে ১,৬০০ গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে কমিশনের ধারণা এই সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “গুম, খুন এবং ছাত্র-জনতার গণহত্যার সাথে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হবে।”

রাজনীতি ও আইনগত জটিলতা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এতো বিপুল সংখ্যক মামলা দায়ের হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে।

তাঁর সমর্থকরা দাবি করছেন, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “এসব মামলা জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার দাবি থেকেই হয়েছে।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলাগুলোর কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।

বিশেষত শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে চাইলে তার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এত সংখ্যক মামলা দায়ের হওয়া নজিরবিহীন।

আইন ও বিচার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

অন্যদিকে, নতুন সরকার গঠনের পরপরই এত বিপুল সংখ্যক মামলা দায়ের হওয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নজর কাড়ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় এসব মামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এখন দেখার বিষয় হলো, বিচারিক প্রক্রিয়া কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে এগোয় এবং শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কেমন হয়।

আরও পড়তে পারেন