সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অতীতের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও কনটেন্ট সব মাধ্যম থেকে সরাতে হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে এই কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশন জানায়, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বক্তব্য ও ফোনালাপ সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এসব বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আদালত মনে করে, এসব বক্তব্য সাক্ষী ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করছে।
প্রসিকিউটররা আদালতে বলেন, “বিশ্বব্যাপী হেট স্পিচ অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।”
তারা আরও বলেন, “এই বক্তব্যগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতায় পড়ে না।”
আইনজীবীরা জানান, কনটেন্ট মুছে ফেলার পাশাপাশি নতুন করে এমন কোনো বক্তব্য যাতে প্রচারিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে, শেখ হাসিনার সাধারণ ও রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “আমরা আদালতের আদেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কাছে পাঠাবো।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, এসব বক্তব্য স্পষ্টতই ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ায়।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে, আদেশ কার্যকর করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আদেশ কার্যকর করতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য ও কটূক্তি বন্ধে এই নিষেধাজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করেন, এই ধরনের বক্তব্য মামলার প্রক্রিয়া এবং বিচারিক স্বচ্ছতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিটিআরসি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার ফলে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তা পর্যবেক্ষণে থাকবে।
এ সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী বা তার পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হবে কিনা, সে বিষয়েও এখনো কিছু জানা যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আদেশ দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।