সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই ২০২৩ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এই তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
পলকের স্বীকারোক্তি নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের মন্তব্য
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, পলক সরাসরি ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছিল, যেখানে আইআইজিগুলোকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, এই নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ইট ইজ ডান’ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটর দাবি করেন, “ইন্টারনেট বন্ধ করে তৎকালীন সময়ে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করেছি এবং পলকের কাছ থেকে এটি সত্যায়িত হয়েছে।”
ইন্টারনেট বন্ধের কারণ নিয়ে বিতর্ক
জুলাই-অগাস্ট মাসে ইন্টারনেট বন্ধের সময় প্রতিমন্ত্রী পলক জানিয়েছিলেন, ডেটা সেন্টারে আগুন এবং সাবমেরিন কেবলের তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়েছে।
সেসময় একটি বার্তায় জানানো হয়েছিল, “সন্ত্রাসীদের আগুনের কারণে ডেটা সেন্টার পুড়ে যাওয়া এবং আইএসপির তার পুড়ে যাওয়ার ফলে সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়েছে।”
পরে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনায় পলক, বিটিআরসি এবং এনটিএমসি সরাসরি জড়িত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে, ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বরং পূর্বপরিকল্পিত।
গণহত্যার ঘটনা আড়াল করার অভিযোগ
ইন্টারনেট বন্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যার ঘটনা আড়াল করা বলে অভিযোগ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
তিনি বলেন, “এই ঘটনা সাধারণ জনগণের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।”
তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই স্বীকারোক্তি এবং তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে তৎকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে।