,

শেখ পরিবার ক্ষমা চাইলে শেখ মুজিব ‘৭১ পূর্ববর্তী ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন

“একাত্তরের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত শেখ পরিবারের,” দাবি নবনিযুক্ত উপদেষ্টার

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, শেখ মুজিবের ’৭১ পূর্ববর্তী জনপ্রিয়তা তাকে সম্মান এনে দিতে পারে যদি তার দল ও পরিবারের সদস্যরা একাত্তর-পরবর্তী ঘটনার জন্য ক্ষমা চান।

মাহফুজ আলমের মতে, শেখ মুজিবের কন্যা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার নামে ফ্যাসিবাদী শাসন পরিচালনা করেছেন। মাহফুজ আরও দাবি করেছেন, মুজিববাদ ও শেখ পরিবারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য পরিহার করা উচিত এবং তাদের শাসনের জন্য জনগণের কাছে দায় স্বীকার করা দরকার।

মাহফুজ আলমের এই পোস্টকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ ও মূর্তি ভাঙা নিয়ে মাহফুজ বলেন, জনগণের উত্তাল আন্দোলনের ফলেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা

মাহফুজ আলম তার পোস্টে উল্লেখ করেন, “শেখ মুজিব ও তার কন্যা তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের রাগের শিকার হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, কিন্তু ’৭১-এর পর তার শাসন ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদে রূপান্তরিত হয়।

মাহফুজ আলম আরও অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনা তার শাসন পরিচালনায় বাবার নাম এবং একাত্তর পরবর্তী চেতনাকে ব্যবহার করেছেন, যা জনগণের দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

“মুজিবের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করুন”

মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, জনগণকে শেখ পরিবারের বন্দনা থেকে মুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, “মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনাও পরিহার করা উচিত। একমাত্র তখনই জনগণের রাগ প্রশমিত হবে এবং তারা আবারও মুজিবকে তার একাত্তর পূর্ববর্তী ভূমিকার জন্য সম্মান জানাবে।”

মাহফুজ আলমের মতে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা অপরিহার্য ছিল, তবে তার পরে দেশের দুর্নীতি, গুম ও হত্যা প্রমাণ করে যে তার নেতৃত্বে দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ

মাহফুজ আলমের মন্তব্যে উঠে এসেছে বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অপসারণের বিষয়টিও।

তিনি বলেন, “তার কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে তার ছবিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জনগণের চাপে সরকারি কর্মকর্তারা এই ছবি সরিয়েছে।”

গত পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর, দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের ছবি, ভাস্কর্য এবং ম্যুরাল অপসারণ করা হয়েছে।

মাহফুজ আলম বলেন, যারা এই অপসারণের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা মূলত গণঅভ্যুত্থান ও জনগণের চেতনাকে অসম্মান করছেন।

ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না

মাহফুজ আলম বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ইতিহাসের অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো সংশোধন করতে।”

তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সংগ্রাম।

মাহফুজ আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোনো নেতাও যদি পরবর্তীতে অপরাধ করে থাকেন, তবে তার বিচার হওয়া উচিত এবং তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

“শেখ পরিবারের থেকে দেবতুল্য ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন”

মাহফুজ আলম দেশের জনগণকে আহ্বান জানান, যেন তারা শেখ পরিবারের প্রতি দেবতুল্য চিন্তা থেকে মুক্তি পায়।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উচিত, শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা থেকে বেরিয়ে আসা।”

মাহফুজ আলমের মতে, শেখ মুজিবের অবদান অস্বীকার করা উচিত নয়, তবে তার পরিবারের বর্তমান আচরণ জনগণের চেতনাকে নষ্ট করেছে।

সংবিধান নিয়ে মন্তব্য

মাহফুজ আলমের মন্তব্যের পাশাপাশি, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও উচ্চ আদালতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, “শেখ মুজিবকে জাতির জনক বলা মূল সংবিধানের কনসেপ্টের পরিপন্থী।”

এছাড়া, তিনি দাবি করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে দেশের মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাহফুজ আলমের মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্যের ফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর রাজনৈতিক চাপ বাড়বে এবং তারা ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে।

বিরোধী দলগুলোও এই বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে বলছে, আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারকে অবশ্যই তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।

“জুলাইয়ের চেতনাকে স্মরণ রাখুন”

মাহফুজ আলম তার পোস্টে শেষমেশ বলেন, “জুলাইয়ের চেতনাকে সবাই স্মরণ রাখুন।”

তার মতে, দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর স্মৃতি মনে রেখে জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা উচিত।

আরও পড়তে পারেন