,

শিক্ষা বোর্ডগুলোর অতিরিক্ত আয় ও বোনাস নিয়ে প্রশ্ন

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত বেতন ও বোনাসের বাইরে ইচ্ছামতো ভাতা ও সম্মানি নিচ্ছেন।

তারা শিক্ষার্থীদের দেওয়া পরীক্ষার উচ্চ ফি থেকে বিপুল অর্থ আয় করছেন এবং ১২ মাসে নিচ্ছেন আটটি বোনাস।

অফিসের নিয়মিত বৈঠকেও নেওয়া হয় সম্মানি।

পরীক্ষার ফির আয়ে বিলাসী জীবনযাপন

শিক্ষার্থীদের দেওয়া পরীক্ষার ফির বড় অংশ আয় করছে বোর্ডগুলো।

ফি থেকে প্রাপ্ত এই অর্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম করে বছরে আটটি বোনাস নেন।

এসব বোনাসের মধ্যে রয়েছে সরকারি বেতনের পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রিক বিশেষ বোনাস।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, পরীক্ষার ফির বেশিরভাগ অংশ পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় অতিরিক্ত ফি যোগ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ে।

২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বোর্ডগুলোর মোট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩৬ কোটি টাকা।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া ফি বাবদ আয় হয়েছে ৪২৯ কোটি টাকা।

এইচএসসি পরীক্ষার ফি থেকে এসেছে ৩০৭ কোটি টাকা।

বোর্ডের খরচ ও সম্মানি বাবদ কিছু অংশ ব্যয় হলেও বড় অঙ্কের অর্থ ফান্ডে জমা থাকে।

ঢাকা বোর্ডের মতো বড় বোর্ডগুলো এই অর্থ দিয়ে এফডিআর জমা রাখছে।

অতিরিক্ত বোনাস ও ভাতা বিতর্ক

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটটি বোনাস নিচ্ছেন, যা সরকারি নিয়মের বাইরে।

ঈদ ও বৈশাখী ভাতার পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রিক বোনাসের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় বেতনভিত্তিক অর্ধেক থেকে পূর্ণ বোনাস নেওয়া হয়।

এছাড়াও সনদে স্বাক্ষর বাবদ এক টাকা করে নেওয়া হয়, যা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত নয়।

ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এক বক্তব্যে জানান, অতিরিক্ত কাজের জন্য এই ভাতা চালু হলেও তা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এই নিয়ম পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, পরীক্ষা ফি থেকে এত আয় হওয়ার পরও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফি মওকুফের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, পরীক্ষা ফি ফ্রি করা উচিত।

শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ

উচ্চ ফি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জামালপুরের এক ছাত্রী পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে আত্মহত্যা করে, যা এই সমস্যার গভীরতাকে সামনে এনেছে।

প্রতি বছর পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের অন্তত দুই থেকে তিনবার উচ্চ ফি দিতে হয়।

কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষা ফি’র সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ যোগ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে।

এ ধরনের আর্থিক চাপে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনটিআরসিএ-ও পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে সমালোচনা চলছে।

শিক্ষা খাতে সংস্কারের দাবি

শিক্ষা বোর্ডগুলোর আয় বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, শিক্ষা খাতে সংস্কার এবং পরীক্ষার ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনার সময় এসেছে।

বিসিএস পরীক্ষার ফি কমানোর মতো স্কুল-কলেজের পরীক্ষার ফিও কমানো উচিত বলে দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বহীন ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বোর্ডগুলোর খরচ ও ভাতা সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তনে মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়তে পারেন