শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেও টিকে গেলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন!

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভক্তির মাঝে বঙ্গভবনের স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তাঁকে অপসারণের দাবি উঠলেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে আপাতত বঙ্গভবনে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য রাষ্ট্রপতি ইস্যুটি বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। তাঁদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্ব নিয়ে গুরুতর অনিয়ম ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। কিন্তু সত্ত্বেও, তাঁকে ঘিরে এখন পর্যন্ত দৃঢ় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার ও অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান

বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ না করার পক্ষে মত দেয়। বিএনপির মতে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন কোনো সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে কোনো জোরালো দাবি উঠে আসেনি। যদিও দলটির নেতৃবৃন্দ বলছেন, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাঁর পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, তবুও দলটি সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট এড়াতে তার স্থায়ী সমাধানের পথে যেতে চায় না।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও পাঁচ দফা দাবি

শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে দেশে বৈষম্য ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, বৈষম্য দূরীকরণ, এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন।

শিক্ষার্থীদের মতে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ওপর তাঁদের ক্ষোভ এখনো প্রশমন হয়নি, বরং ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

ড. ইউনূস ও সরকারের অবস্থান

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারও রাষ্ট্রপতি ইস্যুটি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিদেশে থাকায় এ নিয়ে আলোচনা স্থগিত রয়েছে। তাঁর দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জন্য সরকারের তরফ থেকে বিকল্প ব্যক্তি খোঁজা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ড. ইউনূস থাকলেও, সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি রাজি হননি বলে খবর পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় বিকল্প কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির সন্ধান চালাচ্ছে সরকার।

রাজনৈতিক জটিলতা ও সংবিধান

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে সরানোর জন্য রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের জন্য সংসদের প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত। এর ফলে অভিশংসনের প্রক্রিয়া কার্যকর করার কোনো সংবিধানিক উপায় নেই। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করতে চান, তবে স্পিকারের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগের কারণে স্পিকারের পদটিও শূন্য, যা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সরকারের বক্তব্য

সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।

তাঁর বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে, তবে তাদের সিদ্ধান্ত আসতে কিছু সময় লাগবে। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার এবং অরাজকতা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান।

ভবিষ্যৎ কী?

মোঃ সাহাবুদ্দিন কত সময় রাষ্ট্রপতির পদে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী হতে পারে। যদিও সরকারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এ বিষয়ে ত্বরান্বিত কোনো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই।

শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য এবং সরকারের নানামুখী তৎপরতা রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

আরও পড়তে পারেন