বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণ নিয়ে সাম্প্রতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। মূলত রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণের আসল পরিশোধের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ, তবে রাশিয়ার তরফ থেকে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। পরিবর্তে, রাশিয়া চীনা ব্যাংকের মাধ্যমে সুদের অর্থ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
ঋণ চুক্তির পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা
২০১৬ সালে রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সাল থেকে ঋণের মূল পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ঋণের পরিশোধের সময়সীমা দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করে, যা রাশিয়া প্রাথমিকভাবে মেনে নিলেও পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে রাশিয়া সুদের অর্থ চীনা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ একটি হিসাবে (স্কেরো অ্যাকাউন্ট) এ সুদের অর্থ জমা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় সরাসরি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক চাপ ও ঋণ পুনর্গঠন
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একাধিক কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার ঋণ পুনর্গঠন করা এবং চুক্তি পুনঃনির্ধারণ করা এ মুহূর্তে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার ঋণের পরিমাণ এবং শর্তাবলী নিয়ে কার্যকর আলোচনা না হলে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বড় বড় প্রকল্পের ঋণচুক্তিগুলো এখন নতুন করে পর্যালোচনার আওতায় আসছে।