চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে একটি লাইটার জাহাজে সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জাহাজটি থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচজনের রক্তাক্ত মরদেহ এবং তিনজন গুরুতর আহত ব্যক্তির মধ্য থেকে আরও দুজনের হাসপাতালে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
থেমে থাকা জাহাজ থেকে উদ্ধার লাশ ও আহত
মেঘনা নদীতে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জগামী লাইটার জাহাজ এমভি আল-বাখেরা থেকে প্রথমে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে চাঁদপুর নৌ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহম্মেদ জানান, জাহাজটি থেমে ছিল এবং ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
জাহাজের ডেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাঁচটি লাশের পাশাপাশি গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।
আহতদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে দুজন মারা যান।
ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও গলা কাটা
পুলিশ এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মরদেহগুলোতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
কয়েকজনের গলায় গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
পুলিশ ধারণা করছে, রবিবার দিবাগত রাতেই দুর্বৃত্তরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
মৃত ও আহতরা সবাই জাহাজটির কর্মী ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ঘটনা প্রকাশ
জাহাজটির মালিক দিপলু রানা জানান, রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জাহাজের মাস্টারের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়।
মাস্টার জানিয়েছিলেন যে, জাহাজটি মেঘনা নদীতে বহরের মধ্যে ছিল।
সোমবার সকালে বারবার চেষ্টা করেও জাহাজের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
এ সময় আরেকটি লাইটার জাহাজ মুগনি-৩-এর নাবিকদের তিনি বিষয়টি জানান।
মুগনি-৩ জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া জানান, দুপুর একটার দিকে এমভি আল-বাখেরার কাছাকাছি গিয়ে জাহাজে রক্তাক্ত মরদেহ ও আহতদের দেখতে পান।
এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে।
ডাকাতি নাকি শত্রুতা, তদন্তে বিভ্রান্তি
এমভি আল-বাখেরা জাহাজের মালিক দিপলু রানা জানান, কেন এবং কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা তার জানা নেই।
তিনি বলেন, “এটি ডাকাতি নাকি শত্রুতার কারণে ঘটেছে, তা পুলিশই তদন্ত করে বের করবে।”
নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিত নই কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। জাহাজের আহত কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি।”
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।
ইউরিয়া সার বোঝাই জাহাজের যাত্রা
বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের বরাদ্দকৃত লাইটার জাহাজটি ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।
জাহাজটি ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কাফকো জেটি থেকে পণ্য বোঝাই করে।
জাহাজের পণ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক পারভেজ হোসেন জানান, গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তারা জাহাজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।