খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান
,

ভোটের দাবিতে শিগগির মাঠে নামছে বিএনপি

জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে আয়োজন ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান অসম্ভব।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে বলছে, এসব সংস্কার হতে হবে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন বনাম স্থানীয় সরকার নির্বাচন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, আগামী বছরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে পারে।

তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় ও ক্রম নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজনের পরিকল্পনা উঠে আসছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, দলীয় প্রতীকের বাইরে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের আপত্তির সুযোগ নেই।

পোস্টে তিনি আরও বলেন, স্বাধীন ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ছাড়া একদলীয় শাসন থেকে মুক্তির অন্য কোনো পথ নেই।

তবে বিএনপি মনে করছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব আসলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল।

‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা

বিএনপির নেতাদের দাবি, জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় নির্বাচন ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার পরদিন একটি ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুটি রাজনৈতিক নেত্রীকে উদ্দেশ করে লেখে, ‘দুই আপামুক্ত, এই প্রথম বাংলাদেশ।’

পোস্টটি পরে সরিয়ে নেওয়া হলেও এটি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এ পোস্টের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার ইঙ্গিত রয়েছে।

তারা ২০০৭-০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট ছাড়া স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের কোনো অর্থ নেই।

তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচিত সরকার এ ধরনের নির্বাচন বাতিল করতে পারে, যা দেশের জন্য আরও জটিলতা সৃষ্টি করবে।

সরকার আগে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বলেও দাবি করেন তিনি।

বিএনপির নতুন আন্দোলনের প্রস্তুতি

জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি শিগগিরই নতুন আন্দোলনের সূচনা করবে।

দলটি রাজধানীসহ সারা দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করছে।

শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নেওয়া হলেও প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি রয়েছে।

বিএনপি মনে করছে, সরকারের কয়েকটি সংস্থা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে কাজ করছে।

তারা স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের টানার চেষ্টা করছে।

বিএনপির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে এসব তৎপরতার ওপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়।

তিনি জানান, সংগঠনের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা কোনো লেখা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।

তবে সংগঠনের মিডিয়া সেলকে এমন পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তোলা হয়েছে।

তারা বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ।

সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান

প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এক বৈঠকে জানিয়েছেন, সরকার জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সরকার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আগে দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

তবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, তারা সরকারের পদক্ষেপ দেখে করণীয় ঠিক করবেন।

আরও পড়তে পারেন