ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার গুঞ্জন ভিত্তিহীন
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুঞ্জন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। মাসদুয়েক আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নাটকীয়ভাবে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হাসিনার এখন মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এই গুজবকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে শেখ হাসিনা এখনও দিল্লিতেই রয়েছেন এবং তিনি গত সপ্তাহের মতোই এখানেই অবস্থান করছেন। গণমাধ্যমের খবরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তার গোপন পলায়নের কথা বলা হলেও ভারতের সরকারি সূত্র থেকে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে জল্পনা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ায় যে শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমাইন শহরে পাড়ি জমিয়েছেন। একাধিক সূত্রে বলা হয়, তিনি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে, শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনো পর্যন্ত কোনো সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করতে পারেনি।
শেখ হাসিনার পলায়নের এ খবর বাংলাদেশে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু দিল্লির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা এসব গুজবকে একেবারেই অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, হাসিনার অবস্থান নিয়ে কোনো লুকোছাপা করার প্রয়োজন নেই।
দিল্লিতে থাকার বৈধতা এবং প্রটোকল
ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির সাউথ ব্লকের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র। তারা আরও বলেন, “তিনি এখানে যতদিন থাকতে চান, আমাদের আপত্তি নেই। যদি পরে তিনি অন্য কোনো দেশে যেতে চান, সেটি নিয়েও কোনো গোপনীয়তা রাখার প্রয়োজন হবে না।”
বিভিন্ন সূত্রের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, শেখ হাসিনার অবস্থান এখনও দিল্লিতেই। তার জন্য নির্ধারিত জায়গা থেকে তিনি কোথাও যাননি। ভারতের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ঢাকার প্রতিক্রিয়া এবং বিদেশি গুজব
শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চিত তথ্য পায়নি। তিনি বলেন, “আমরা দিল্লি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয় জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, তবে কোনও পক্ষই নিশ্চিত করতে পারেনি।”
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবগুলো নিয়েও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা কিছু দেখেছি এবং শুনেছি যে তিনি আজমাইনে অবস্থান করছেন, তবে সেটি রিকনফার্ম করতে পারিনি।”
শামীম ওসমানের ভূমিকা ও জল্পনা
শামীম ওসমানের সাথে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য যোগাযোগ এবং তার ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে শামীম ওসমানকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে এবং পরে দুবাইয়ের একটি শপিং মলে দেখা গেছে। এসব থেকেই ধারণা করা হয়, শেখ হাসিনা শামীম ওসমানের সাহায্যে আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এ সম্পর্কেও কোনো পাকা প্রমাণ এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি।
ভারত সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলা নিয়ে ভারত সরকারের ওপর ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মোদি সরকারকে কূটনৈতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ ভারতের কাছে জানতে চেয়েছে, শেখ হাসিনা কোন প্রটোকলে ভারতে অবস্থান করছেন। এই চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারকে পরিস্থিতি সামলাতে কঠিন অবস্থানে যেতে হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত সরকার এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে অভ্যন্তরীণভাবে তারা ব্যাপক চাপে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পলায়ন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
শেখ হাসিনার পলায়ন নিয়ে যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে তার ১৫ বছরের শাসনামল শেষ হয়ে যায় এবং তিনি দ্রুত দেশত্যাগে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে, যা তার ভারতে অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে। দেশটির নতুন সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দিয়েছে।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে চলমান গুঞ্জনের মধ্যে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ভারত সরকার তাকে কতদিন আশ্রয় দেবে, কিংবা তিনি কোথায় যাবেন, তা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিবেশ শেখ হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তা হলো শেখ হাসিনা এখনও দিল্লিতেই আছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার খবরগুলো স্রেফ গুজব।