শেখ হাসিনা
, ,

ভারতে আশ্রয়ে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতা নিয়ে সরকার, বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে ভার্চুয়াল বক্তৃতার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব হয়ে উঠেছেন।

নির্বাসনে থাকার পরও তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সংকট মোকাবিলায় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভার্চুয়াল অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক দলীয় কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অংশ নেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়ে জনগণের অধিকার হরণ করা হয়েছে।

আলোচনায় তিনি দাবি তোলেন, ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।

ভার্চুয়াল বক্তব্যে শেখ হাসিনা দাবি করেন, জনগণই অপরাধীদের চূড়ান্ত বিচার করবে।

তিনি বলেন, যারা জনগণের অধিকার হরণ করেছে, তারা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে।

বক্তৃতায় শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেন।

তিনি বলেন, “দলের শক্তিকে জনগণের শক্তিতে পরিণত করতে হবে।”

তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে সহায়ক হবে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি

আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তব্যকে সংকটকালে দলের মনোবল বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন।

তারা বলছেন, তার নির্দেশনা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঠিক পথনির্দেশ দিতে সহায়তা করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্য দলের ঐক্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি জানান, বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবসকে ঘিরে দলের কর্মসূচি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশনা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়ক হবে।”

তিনি দাবি করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, “আমরা দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।”

তিনি জানান, শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের কাজ করছেন।

দলটির নেতারা মনে করছেন, তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপি দাবি করেছে, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ‘পলিটিক্যাল স্পেস’ তৈরির প্রয়াস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনা তার অবস্থানকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।”

তিনি আরও বলেন, ভারতে আশ্রিত থেকে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

বিএনপি নেতাদের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তার অপরাধের দায় এড়ানোর একটি কৌশল।

আমীর খসরু বলেন, “তার রাজনৈতিক বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্যও ক্ষতিকর।”

বিএনপি মনে করে, শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তব্য তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

তারা অভিযোগ করে, তার বক্তব্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বিএনপি নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্য সরকারকে বিব্রত করতে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।

তারা তার বক্তব্যকে জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতারণার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতাগুলোকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এবং বেআইনি বলে অভিহিত করেছে।

দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন এবং গণআন্দোলনের মুখে পালিয়ে গিয়েছেন।”

মতিউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কোনো নৈতিক বা আইনগত বক্তব্য রাখার অধিকার নেই।”

জামায়াতের দাবি, ভার্চুয়াল বক্তৃতার মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন।

তারা মনে করে, এসব বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মতিউর রহমান বলেন, “তার বক্তব্য সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।”

তিনি আরও দাবি করেন, শেখ হাসিনা যে পরিস্থিতিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে।

জামায়াত মনে করে, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য এই ধরনের বক্তব্য একধরনের ষড়যন্ত্র।

তারা দাবি করে, শেখ হাসিনার এই অবস্থান দেশের স্বার্থের পরিপন্থী।

জামায়াত নেতারা মনে করেন, ভারতে থেকে দেওয়া এই বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা মিথ্যা অভিযোগ এনে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন।”

তৌহিদ হোসেন আরও দাবি করেন, “এই প্রচারণা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য মোটেও সহায়ক নয়।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, শেখ হাসিনা সরকার-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন।

তিনি বলেন, “ভারতে আশ্রয় নেওয়া একজন রাজনীতিবিদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড দুই দেশের জন্যই সমস্যাজনক।”

তৌহিদ হোসেন দাবি করেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে ভারত সরকারের উচিত তাকে রোধ করা।”

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারের মতে, এই বক্তব্যগুলো রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

তারা মনে করেন, তার বক্তব্যের কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বক্তব্যে জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার বক্তব্যকে তার অবস্থান ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

তারা বলছেন, ভার্চুয়াল বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন।

তারা বলছেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে বক্তৃতা দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করছেন।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “তার বক্তব্য সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর একটি উপায় হতে পারে।”

তারা মনে করেন, এই ধরনের বক্তব্য আওয়ামী লীগকে আবার সংগঠিত হওয়ার একটি সুযোগ দিতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও বলেন, ভার্চুয়াল বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি দলের নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

তাদের মতে, তার বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

তবে বিশ্লেষকরা এটাও মনে করেন, তার বক্তব্য রাজনৈতিক বিরোধ বাড়ানোর একটি মাধ্যম হতে পারে।

তারা বলেন, “এই বক্তব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার বক্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তারা বলছেন, “এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করতে পারে।”

আরও পড়তে পারেন