আন্দোলনকারী ছাত্র
,

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্র: ৩১ ডিসেম্বরের অপেক্ষা

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। “থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, নাও অর নেভার”—এমন স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সরকারের উপদেষ্টা ও এই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদও একই ধরনের পোস্ট করেছেন। তিনি এক পোস্টে লেখেন, “প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন”।

এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, ৩১ ডিসেম্বর কী ঘটতে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই পোস্টগুলো একটি বড় রাজনৈতিক বা সামাজিক ঘোষণার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

বৈষম্যহীন সমাজের ঘোষণাপত্রের কাজ চলছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
এই ঘোষণাপত্রে থাকবে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পরিকল্পনা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের অসমাপ্ত কাজগুলোর রূপরেখা।

আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেছেন, “জুলাইয়ের অভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি পূর্ণাঙ্গ করতে আমরা জাতির কাছে আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করব।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণআন্দোলনের অংশীদার এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেই ঘোষণাপত্রটি তৈরি করা হচ্ছে।

এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামোর চিত্র তুলে ধরা হবে।

কেন এই ঘোষণা জরুরি হয়ে পড়লো?

গত ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একাধিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। সেই সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও তা বিপ্লবী সরকার হয়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, এই ঘোষণাপত্র সেই ঘাটতি পূরণ করবে।

সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। আমরা তা ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চাই।”

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, “এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, এটি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিকনির্দেশনা।”

কী থাকতে পারে ঘোষণাপত্রে?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের ‘স্পিরিট’ বা চেতনাকে তুলে ধরা হবে।

শিক্ষার্থীদের অধিকার, মৌলিক চাহিদা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পরিকল্পনা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
একজন সংগঠক বলেছেন, “গত পনেরো বছরে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা এবং দমন-পীড়নের ফলে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এই অভ্যুত্থান ঘটেছে।”

আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেছেন, “আমরা কেমন রাষ্ট্র চাই, সেটি এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকবে।”

এর মধ্যে ভোটাধিকার, গুম-খুন প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মতো বিষয়গুলোও জায়গা পাবে।

এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ধরা হবে গত ৫ অগাস্ট থেকে। আন্দোলনের এক নেতা বলেছেন, “এটি রেট্রোস্পেক্টিভ বা পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর হবে। কারণ, অভ্যুত্থানের ভিত্তি তখনই স্থাপিত হয়েছে।”

৩১ ডিসেম্বরের কর্মসূচি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।

আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, “এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা হতে যাচ্ছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই পোস্টগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এটি।

নাগরিকদের অনেকে ধারণা করছেন, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সূচনা হতে পারে।
তবে আন্দোলনের নেতারা এই ধারণা নাকচ করেছেন।

সরকারি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র, যা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, এটি কেবল একটি দল বা গোষ্ঠীর জন্য নয়; এটি দেশের সব মানুষের জন্য।

আরও পড়তে পারেন