পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি তার রাজনৈতিক উপস্থিতি দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
ইমরানের ডাকা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এসেছেন দেশটির সাবেক এই ফার্স্টলেডি।
বন্দি স্বামীর মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
বুশরার অংশগ্রহণ রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুশরার জনসমক্ষে আসা ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)-এর ডাকে সোমবার রাতে ইসলামাবাদের ডি-চকে সমবেত হন প্রায় ১০ হাজার কর্মী।
এই বিক্ষোভে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে অংশ নেন বুশরা বিবি।
সেখানে উপস্থিত পিটিআই কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ইমরান খান ছাড়া কেউ চলে যাবেন না।”
বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
তবে বুশরার এমন দৃঢ় ভূমিকা তার রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতৃত্বের প্রতি নতুন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, “বুশরা একজন অরাজনৈতিক মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার সাম্প্রতিক ভূমিকা আমাদের সেই ধারণা বদলে দিয়েছে।”
ইসলামাবাদে বিক্ষোভের আগে পিটিআই কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে বুশরা তাদের ইমরান খানের পক্ষে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইমরান খানের বার্তা এবং বুশরার ভূমিকা
বুশরার এই উপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
পিটিআইয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বুশরা বিবি ইমরানের পক্ষ থেকে তার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
তাকে দলের রাজনৈতিক নেতা নয়, বরং একজন স্ত্রীর ভূমিকায় দেখা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইমরান খান একটি বার্তায় বলেন, “বুশরার রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমরানের প্রতি সমর্থনের কারণেই বুশরা বিক্ষোভকারীদের কাছে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “বুশরার নেতৃত্ব পিটিআইকে নতুন গতি দিয়েছে। তবে এতে দলের ভেতরে কিছু বিভেদ দেখা দিতে পারে।”
দলের অনেক নেতার সঙ্গে বুশরার সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকলেও তার উপস্থিতি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানে নারীদের রাজনৈতিক উত্থান
পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের সময় নারীদের অগ্রণী ভূমিকা নতুন কিছু নয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো ও মরিয়ম নওয়াজ শরীফের মতো নারীরা এ ধরনের সংকটকালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন।
বেনজীর ভুট্টো তার বাবার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
মরিয়ম নওয়াজও তার বাবা নওয়াজ শরীফ কারাবন্দি হওয়ার পর নেতৃত্বে আসেন।
বুশরা বিবির সাম্প্রতিক উপস্থিতি তাদের সঙ্গে তুলনা করছে অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যখন দাবার সৈনিকেরা পরাজিত হয়, তখন রানী এগিয়ে আসেন।”
ইসলামাবাদে বিক্ষোভে ট্রাকের ওপর বুশরার দৃঢ় অবস্থানকে প্রশংসা করেছেন অনেক পাকিস্তানি।
বুশরা কি ইমরানের রাজনৈতিক আন্দোলনে নতুন গতিপ্রদান করবেন, নাকি তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দলকে বিভক্ত করবে, সেটি এখন সময়ই বলে দেবে।