বিদেশে পাসপোর্ট ইস্যুতে হাহাকার করছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ার মতো শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
পাসপোর্ট নবায়নে দেরির কারণে অনেক প্রবাসী ভিসা নবায়ন করতে পারছেন না।
এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফিরতে না পেরে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
মালয়েশিয়ায় এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) সেবা বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা ক্রমাগত রেমিট্যান্স বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।
দেশটির বাংলাদেশ মিশনে পাসপোর্ট আবেদনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রবাসীরা এখনো নতুন পাসপোর্ট হাতে পাননি।
ফলে তারা অবৈধ অভিবাসীর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অনেকে দৈনন্দিন কাজে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন, এমনকি কাজের অনুমতিপত্র নবায়নও করতে পারছেন না।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, এমআরপি বই ও লেমিনেশন ফয়েলের ঘাটতির কারণে নতুন পাসপোর্ট ইস্যুতে দেরি হচ্ছে।
তবে হাইকমিশন অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হিসেবে ই-পাসপোর্ট সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
প্রবাসীরা অতিরিক্ত ৫১ রিঙ্গিত জমা দিয়ে ই-পাসপোর্ট নিতে পারবেন।
সংকট সমাধানে সরকারী উদ্যোগ
প্রবাসীদের ভোগান্তি নিরসনে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।
গতকাল পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে পাসপোর্ট অধিদপ্তর দ্রুততম সময়ে সাড়ে তিন লাখ এমআরপি বই সংগ্রহের ঘোষণা দেয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যেই ১ লাখ ৯০ হাজার পাসপোর্ট বিদেশের মিশনগুলোতে পৌঁছানো হবে।
বাকি পাসপোর্ট আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।
সরকার পাসপোর্ট সংকট সমাধানে নতুন দরপত্র আহ্বান করেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচআইডি সিআইডি লিমিটেড থেকে ১৫ লাখ এমআরপি বই এবং লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করা হবে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এমআরপি সেবা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনাও বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের চাপ
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করে অপেক্ষায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রতিদিন শত শত প্রবাসী পাসপোর্টের জন্য ভিড় করছেন।
কেউ পাসপোর্ট না পেয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন, আবার কেউ রয়েছেন অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে।
মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমআরপি বুকলেট ঘাটতির পাশাপাশি প্রিন্টিং মেশিনের ত্রুটি সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর দ্রুত ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
তাদের দাবি, যেসব প্রবাসী ই-পাসপোর্টের জন্য অতিরিক্ত ফি জমা দিচ্ছেন, তাদের আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে।
এ সংকট প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যেন দ্রুত পাসপোর্ট সমস্যার সমাধান করা হয়।
সরকারি উদ্যোগগুলো এ সংকট কতটা প্রশমিত করবে, তা নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।