গত আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ছাত্র আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতি অপসারণ এবং সংবিধান বাতিলের দাবিতে সরব হলেও এই ইস্যুতে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংঘাত স্পষ্ট।
বিএনপি ছাত্রদের দাবিকে রাজনৈতিক চাপ হিসেবে অভিহিত করলেও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের দাবির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর উপেক্ষা সংকটকে গভীরতর করেছে।
ছাত্রদের অভিযোগে উঠে এসেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি পূরণে অনাগ্রহী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক বলেছেন, ‘বিএনপি ছাত্রদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং উল্টো চাপ সৃষ্টি করছে।’
সংবিধান ইস্যুতে মতানৈক্য
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দাবি, ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করা।
এ দাবিকে ঘিরে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েন বেড়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘শহীদের রক্তে অর্জিত সংবিধান বাতিলের কথা শুনলে কষ্ট লাগে। সংবিধান সংশোধন হতে পারে, কিন্তু বাতিল নয়।’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণের দাবিও ছাত্রদের আন্দোলনে মুখ্য হয়ে উঠেছে।
বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল মনে করে, রাষ্ট্রপতি অপসারণে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
এমন অবস্থায় ছাত্রদের দাবি কার্যকর করা কঠিন বলে মত দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
‘মার্চ ফর ইউনিটি’ ও ছাত্রদের দাবি
‘মার্চ ফর ইউনিটি’ নামে ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি সমাবেশ আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই সমাবেশে শেখ হাসিনার বিচার, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘ইউনিটির নামে মিটিং করে ফ্যাসিবাদীদের সহায়তা করা হচ্ছে কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে।’
ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা প্রোক্লেমেশন (ঘোষণাপত্র) প্রকাশের পথে ছিলাম। তবে সরকারের অনুরোধে তা স্থগিত করেছি।’
ছাত্রদের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ছাত্রদের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বিএনপি ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রাখার কথা বললেও তাদের দাবিকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিএনপির উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘আমরা তারুণ্যের শক্তি এবং বয়স্কদের অভিজ্ঞতাকে একত্রে কাজে লাগাতে চাই। আলোচনা সবার সঙ্গে হওয়া উচিত।’
জামায়াতে ইসলামীও ছাত্রদের দাবিকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন না দিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য ঐকমত্য প্রয়োজন।’
রাজনৈতিক চাপে নতুন মাত্রা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের দাবির মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তাদের প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্র এবং ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি উন্মোচিত করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।