,

বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত ঢাকা: শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী

ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধুলাবালি, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং অব্যাহত নির্মাণকাজের কারণে ঢাকার বাতাস বছরের বড় একটি অংশ জুড়ে তলানিতে থাকে।

বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প, রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান সূচক (আইকিউএয়ার) প্রায়ই ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করে।

বায়ুদূষণের ভয়াবহ পরিসংখ্যান

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ঢাকার বায়ুমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ১৫১ থেকে ২৯৯-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে।

স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে বায়ুমানকে “অস্বাস্থ্যকর” এবং ২০১ থেকে ৩০০ হলে “খুবই অস্বাস্থ্যকর” বলে ধরা হয়।

গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঢাকার বায়ুমান একদিনের জন্যও ১৫০-এর নিচে নামেনি।

নভেম্বর মাসের ১৪ দিন এবং ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে ঢাকার বাতাস “খুবই অস্বাস্থ্যকর” অবস্থায় ছিল।

ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও পরিস্থিতি খারাপ। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহীসহ অন্যান্য এলাকায় বায়ুমান প্রায়ই বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে।

নির্মাণকাজ ও ধুলাবালির সরাসরি প্রভাব

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলমান মেগা প্রকল্প এবং ভবন নির্মাণকাজ ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।

শাহজাহানপুর, খিলগাঁও এবং কমলাপুরে চলমান মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের ধুলাবালিতে স্থানীয় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের আবু সাঈদ নামে এক দোকানদার জানান, প্রতিদিন তিনবার পানি ছিটানো সত্ত্বেও ধুলা শুকিয়ে আবার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভবন নির্মাণের কারণে চা দোকানি রিপন মিঞার দোকানে বারবার ধুলা জমে যায়।

শহরের রাস্তায় রাতে বালুবাহী ট্রাকের যাতায়াতও একটি বড় দূষণের কারণ।

স্বাস্থ্যঝুঁকি: শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ওপর প্রভাব

ঢাকার বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধুলাবালির কারণে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং হাঁপানির মতো রোগ বেড়ে চলেছে।

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বায়ুদূষণের কারণে গর্ভপাত এবং অপরিণত শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ।

২০২১ সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ১৯ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

কেন বাড়ছে দূষণ?

পরিকল্পনাহীন নগরায়ন ঢাকার বায়ুদূষণের বড় কারণ।

শহরের চারপাশে ইটভাটা, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া এবং নিয়ম না মেনে বর্জ্য পোড়ানো দূষণ বাড়াচ্ছে।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জানান, ঢাকার বায়ুদূষণের বড় উৎস নির্মাণ কাজ ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া।

তিনি মনে করেন, বায়ুদূষণ কমাতে নির্মাণ কাজের সঠিক নিয়ম মেনে চলা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সুসংগঠিত করতে হবে।

শহরের ভেতরে শিল্প-কারখানা না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দূষণমুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। ঢাকার পরিস্থিতি পরিবর্তনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

আরও পড়তে পারেন