জাতীয় সংস
,

বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি অর্থে নির্ভরতা বৃদ্ধি

বাংলাদেশে বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশাল বাজেট ঘোষণা করলেও রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

ফলে দেশি-বিদেশি ঋণের পাশাপাশি বহুজাতিক সংস্থাগুলোর বাজেট সহায়তা গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে।

বিগত বাজেটগুলোর ধারা এবং রাজস্ব ঘাটতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্য ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নিয়েছিল বাংলাদেশ।

এরপর প্রতি অর্থবছরে এই সহায়তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০৩ কোটি ডলার।

বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় অর্থনৈতিক চাপে সবচেয়ে বেশি বাজেট সহায়তা নেয় সরকার।

রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি না থাকায় সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হবে।

এই পরিমাণ রাজস্ব আয়কে ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।

আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থার শর্ত এবং প্রভাব

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো দাতাগোষ্ঠীগুলো বাজেট সহায়তার শর্ত আরোপ করে থাকে।

আইএমএফ সম্প্রতি মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় করার এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে।

শর্ত পূরণে সরকার নতুন করে ৬৫টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে।

এতে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আইএমএফের শর্ত মেনে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব দ্রব্যমূল্যে পড়ছে।

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সংস্থাটি চাপ দিলেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কায় তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

তবে অতীতে আইএমএফের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদলানোর নজির রয়েছে।

বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনীতিবিদদের মতামত

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা সরকারের নীতিগত স্বাধীনতাকে খর্ব করছে।

বাজেট সহায়তা গ্রহণের ফলে সরকারকে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর শর্ত পূরণে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

এতে মানবকল্যাণমূলক প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ কমে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত কমে যাওয়ার কারণে ঋণনির্ভরতা বেড়েছে।

তিনি মনে করেন, বিদেশি ঋণ বাড়ানোর চেয়ে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

অন্যদিকে, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বাজেটের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে দায়ী করেছেন।

ঋণ পরিশোধ এবং ভবিষ্যৎ বাজেটের সম্ভাবনা

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণে উঠে এসেছে, আগামী দুই অর্থবছরে সরকারের ঋণ আরও বাড়তে পারে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণ ২১ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে ঋণ এবং বিদেশি ঋণ উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমান বাজেটের অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করেন, প্রকল্প যাচাই-বাছাই এবং সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো জরুরি।

অন্যথায়, অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জনগণের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে।

আরও পড়তে পারেন