,

বাজেটে ঋণ সহায়তা বাড়ছে, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে চ্যালেঞ্জে রয়েছে সরকার

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

তবে, রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশার তুলনায় ঘাটতির কারণে সরকারি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চাপ কমবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাজেট সহায়তায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার আসার প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে আগামী মাসে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বাজেট সহায়তা চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখবে।

তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজস্ব ঘাটতির কারণে এই ঋণ প্রবাহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চাপ কমাতে যথেষ্ট হবে না।

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি এবং এনবিআর সংস্কার

২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

রাজস্ব বোর্ড ১,০১,২৮১ কোটি টাকা সংগ্রহ করলেও ৩০,৮৩১ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি বিভাগকে কার্যনির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এই পৃথকীকরণ ২০০৩ সাল থেকে আলোচনায় থাকলেও কার্যকর করা হয়নি।

রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধুমাত্র পৃথকীকরণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করবে না।

সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দক্ষ নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করাই সফল সংস্কারের চাবিকাঠি।

কর ফাঁকির ক্ষতি এবং বাজেট ঘাটতির প্রভাব

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের ‘স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর ফাঁকির কারণে বাংলাদেশ বছরে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে।

এটি দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ২১.৪ শতাংশের সমান।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪,৮০,০০০ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১,৩৭,৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০,৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে এবং বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে আরও ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণের বিষয়ে অগ্রগতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইএমএফের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে।

আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল আগামী সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসবে।

তারা অতিরিক্ত ঋণের শর্ত এবং চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে।

এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের বাজেট সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করতে সম্মত হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খাইরুজ্জামান মজুমদার জানিয়েছেন, এই অর্থ প্রবাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করবে।

সরকারি ব্যয়ের চাপ এবং অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরপিআইডি-র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের আর্থিক অপব্যবস্থার জন্য অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি দায়ী।

তিনি বলেন, ব্যয় সংকোচনই সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে রয়েছে।

বাজেট সহায়তা ছাড় হলে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

আরও পড়তে পারেন