মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।
গত পাঁচ মাসে দেশে ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে সরকারি তথ্য রয়েছে।
মিয়ানমারের মংডু শহরসহ ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে।
নতুন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান করছে।
সীমান্তে উত্তেজনা: বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী মিয়ানমার অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
আরাকান আর্মির দখলের ফলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশকে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক আমিনা মহসিন বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই ফ্রন্টে চাপ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমার ইস্যুতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।
একদিকে সামরিক জান্তা সরকার, অন্যদিকে আরাকান আর্মি—এ দুই পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আরাকান আর্মির সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ রক্ষার বিকল্প নেই।
তবে এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনা এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ পারভেজ করিম আব্বাসি।
রাখাইন অঞ্চলের জটিল পরিস্থিতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন সংকট
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
আরাকান আর্মির দখলের কারণে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আরাকান আর্মি রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন চায়, যা নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুনীরুজ্জামান মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের ভূমিকাও নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নয়াদিল্লি জান্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকলেও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
বাংলাদেশ সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্ত এখন পুরোপুরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে।
তবে স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে জান্তার ৩০টিরও বেশি ঘাঁটি দখল করেছে।
এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি কূটনৈতিক আলোচনা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।