বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের জন্য দুটি টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতের উন্নয়ন এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ দুই লাখ টাকার নিচে। প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার আওতায় থাকবে। ফলে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের তাদের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সব আমানতকারীর পাশে আছে সরকার।”
দুটি টাস্কফোর্স গঠন: ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধি
আহসান এইচ মনসুর জানান, দুটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যাদের মধ্যে একটি ব্যাংকিং খাতের জন্য এবং অন্যটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবে। প্রথম টাস্কফোর্সটি ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করবে এবং তাদের সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করবে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে টাস্কফোর্সের কাজ হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো তদারকির ব্যবস্থা করা।
গভর্নর বলেন, “দুর্বল হয়ে পড়া ১০টি ব্যাংককে নিবিড় তদারকিতে রাখা হচ্ছে এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদি তারা সফল না হয়, তবে এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”
কমিশন নয়, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের পরিকল্পনা
সরকারের ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দাবি থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত সংস্কারের জন্য একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে। গভর্নর বলেন, “কমিশন গঠন করলে সংস্কার প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ হবে এবং কমিশনের ক্ষমতা সীমিত থাকে। তাই একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এই সংস্কার কাজটি দ্রুত করা সম্ভব।”
ব্যাংক খাতে আমানতকারীদের নিরাপত্তা ও আস্থা বৃদ্ধি
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা বাড়ানো। এ জন্য প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে, ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী তাদের পুরো টাকা ফেরত পাবেন।”
গভর্নর আরও বলেন, “দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। এসব ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে একীভূত করা হবে।”
দুর্বল ব্যাংকগুলোর তদারকি ও সম্ভাব্য ব্যবস্থা
গভর্নর জানান, “প্রতিদিন দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সভা হচ্ছে এবং তাদের নিবিড় তদারকির আওতায় রাখা হয়েছে। এসব ব্যাংক যেন আরও নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়, সেই চেষ্টা চলছে। সব সমস্যা চিহ্নিত হলে প্রয়োজনে ব্যাংক আইনে পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক খাতের বাইরে ৭০ হাজার কোটি টাকা চলে গিয়েছিল, যার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত এসেছে। টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।”
ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার গুজব খণ্ডন
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংক হিসাব স্থগিত নিয়ে প্রচলিত গুজব খণ্ডন করে বলেন, “বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেনি, বরং ব্যক্তির হিসাব স্থগিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সব প্রতিষ্ঠান চালু থাক। দেশের উৎপাদন-কর্মসংস্থান যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাস্কফোর্স গঠন উদ্যোগ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং আমানতকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতে আরও সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণের আশা ব্যক্ত করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
Leave a Reply