দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণের আট মাসও পার হয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর। তবে এরই মধ্যে অধিনায়কত্বের বোঝা তার জন্য ভারী হয়ে উঠেছে কিনা, এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজ শেষেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাজমুল। খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি চান নাজমুল। এমনকি, অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়টি নাজমুল নিজেও নিশ্চিত করেছেন। তিনি ক্রিকবাজকে বলেছেন, ‘দেখা যাক কী হয়, কারণ এখনো (বোর্ড) সভাপতির কাছ থেকে কোনো কিছু শুনিনি।’
বিসিবি সভাপতির দেশে ফেরার অপেক্ষা
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। দুবাইয়ে আইসিসি সভা শেষে ওমরাহ পালন করে তিনি দেশে ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশে ফেরার পর নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। বিসিবি সভাপতির দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন নাজমুল নিজেও।
নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ অবগত আছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তবে সভাপতির দেশে ফেরার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
অধিনায়ক হিসেবে শান্তর পথচলা ও পরিসংখ্যান
গত ফেব্রুয়ারিতে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন নাজমুল। নিয়মিত অধিনায়ক না থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করা নাজমুলের অধীনে বাংলাদেশ দল গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচে জয় লাভ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ পর্যন্ত নয়টি টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনটিতে জয় পেয়েছেন নাজমুল। এই জয়গুলো নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে এসেছে, যা তাকে একজন সফল অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত করেছে। ওয়ানডেতে ৯টি ম্যাচে তিনটি জয় এবং টি-টোয়েন্টিতে ২৪ ম্যাচে দশটি জয় পেয়েছেন তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ।
তবে, পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, নাজমুলের ব্যাটিংয়ে অধিনায়কত্ব কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। টেস্টে তার ব্যাটিং গড় অধিনায়ক হিসেবে ২৫.৭৬, যা তার ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে কম। ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে গড় ৫২, যা ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে ভালো। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং গড়ে অধিনায়ক হিসেবে কিছুটা পতন লক্ষ্য করা যায়।
নেতৃত্ব ছাড়ার কারণ: ব্যক্তিগত ও পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ
নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার কারণ হিসেবে দুটি কারণ জানিয়েছেন বিসিবি কর্মকর্তারা। প্রথমত, ‘ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি, যা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেননি। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অধিনায়কত্ব ছাড়লে ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ দিতে পারবেন।
তবে, অধিনায়কত্ব নেওয়ার আগে নাজমুল বলেছিলেন যে অধিনায়কত্ব তার ওপর কোনো চাপ ফেলে না। তখন তিনি বলেন, ‘আমি যখন ব্যাটিং করি, তখন আমার কিন্তু মনে থাকে না আমি অধিনায়ক।’
বিসিবির কাছে নেতৃত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত
ক্রিকবাজের তথ্যমতে, নাজমুল আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে নেতৃত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে শুরুতে তিনি শুধু টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়তে চাইলেও পরবর্তীতে তিন সংস্করণের নেতৃত্বই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দল নির্বাচন ও আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় নাজমুল পরামর্শ দিয়েছেন, ভবিষ্যৎ অধিনায়কের সঙ্গে দল নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
নতুন অধিনায়কের প্রয়োজন: তিন সংস্করণের জন্য
নাজমুলের নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তের ফলে বিসিবিকে নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর তিন সংস্করণের ক্রিকেটের জন্য নতুন একজন অধিনায়ক নিয়োগের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
এই মুহূর্তে বিসিবি নতুন কোচ ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দিয়েছে এবং এবার নেতৃত্ব পরিবর্তনও আসতে পারে। নাজমুলের নেতৃত্ব ছাড়ার এই খবর বিসিবির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে।
নেতৃত্বে পরিবর্তন নিয়ে বিসিবির উদ্বেগ
নাজমুলের সিদ্ধান্ত বিসিবির কর্মকর্তাদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দল একটি সাফল্যের ধারায় ছিল এবং মাঠে তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে।
অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরও বিসিবি তাকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে বলে জানা গেছে। তবে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বিসিবির অনুরোধ সত্ত্বেও নাজমুল নেতৃত্বের দায়িত্ব পুনর্বিবেচনা করতে চান না।
সিদ্ধান্তে শর্ত সাপেক্ষে পরিবর্তনের সম্ভাবনা?
নাজমুলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিসিবি যদি কিছু শর্ত পূরণ করতে রাজি হয় তবে তিনি হয়তো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। তবে, বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছে না।
এখন দেখার বিষয়, বিসিবি সভাপতির দেশে ফেরার পর নাজমুলের নেতৃত্ব নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল নতুন নেতৃত্ব পাবে কিনা।