সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর আওতায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি এখন সরকারিভাবে একটি নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ১৫ বছরের শাসনামলে ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিল।
বিশেষ করে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, ছাত্রলীগের অনেক অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনার প্রমাণ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত কয়েক মাস ধরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনা চলছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দিয়েছিল যে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে।
এই আল্টিমেটামের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বুধবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।
অনেক শিক্ষার্থী রাতেই মিছিল বের করে আনন্দ উদযাপন করেন।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে এ সিদ্ধান্তের কারণে হতাশা দেখা দিয়েছে।
ছাত্রলীগের ইতিহাস ও অবদান
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের অন্যতম প্রাচীন ছাত্র সংগঠন।
ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে সংগঠনটি রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছে।
বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল নিয়মিত।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন সন্ত্রাস দমনে সরকারের নীতির একটি বড় অংশ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোরভাবে নজরদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে, সংগঠনটির নেতাকর্মীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এখনও অনিশ্চিত।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি দেশের ছাত্র রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।
সরকার জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকরণ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।