প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, উদ্দেশ্য একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য গঠন করা।
এ বৈঠকটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়ার উপর ওঠা সংকট এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি।
সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি ও সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এটি চলমান থাকবে।
তার মতে, পূজার ছুটিসহ অন্যান্য বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, এবং পর্যায়ক্রমে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে, সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের তরফ থেকে আসা আট দফা দাবির মধ্যে ছিল দুর্গাপূজায় পাঁচদিন ছুটি প্রদান, এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
প্রধান উপদেষ্টা নিজেই সংখ্যালঘুদের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং তাদের দাবিগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংকটটি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতন
জুলাইয়ের প্রথম দিকে দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতন বৃদ্ধি পায়।
এই সময়ে অন্তত ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, এই হামলা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সময়ই সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি জানানো হয়, যা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এসব দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, সংখ্যালঘু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন।
এই দাবি গুলোর প্রতি সরকারের মনোযোগ আকর্ষিত হলেও, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্দোলনের একজন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থানে হামলার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব হামলার কোনো প্রমাণ নেই এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্য গঠনে সরকারের কৌশল
জাতীয় ঐক্যের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
এ বৈঠকের মাধ্যমে, তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী ঐক্য গঠন করতে চান।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে যথেষ্ট আন্তরিকতা প্রদর্শন না করে, তবে জাতীয় ঐক্য গঠন খুব কঠিন হবে।
ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করলেও, এর কার্যকর ফলাফল অনিশ্চিত।
সুমন কুমার রায় বলেন, সরকারের তীব্র ব্যর্থতা ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বিষয়ে সরকারের ভূমিকা অসন্তোষজনক।
তিনি আরও বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার সরকারের ভেতরকার একটি অংশের স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা ছিল।
এদিকে, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মনে করেন যে, সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট এবং সংখ্যালঘুদের দাবি ও ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ বলেছেন, সরকারের আলোচনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কিন্তু তা যদি শুরুতেই গ্রহণ করা হতো, তবে সমস্যা এতদূর গড়াত না।
তিনি মনে করেন, জাতীয় ঐক্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের জন্য সরকারের আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট।
বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিত, তবে জাতীয় ঐক্যের ডাক জোরালো হতে পারত।