,

বাংলাদেশে জনপ্রশাসন সংস্কার: আমলাতন্ত্রের সুবিধাভোগিতা ও বিরোধ

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সুবিধা কাঠামো ও এর সংস্কারের প্রশ্নে ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ চলছে। বিশেষত প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিরোধ আরও প্রকট।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিরোধ সামনে আসে। কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধা বজায় রাখতে এবং পদের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য ও সংস্কারের বিরোধিতা

বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারি চাকরির মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাভোগী। তাদের জন্য একাধিক আর্থিক ও পদোন্নতির সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।

২০১৫ সালের বেতন স্কেলের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বেতন দ্বিগুণ, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, গাড়ি ঋণসহ নানা সুবিধা পেয়েছেন।

এত সুবিধার পরও তারা জনপ্রশাসন সংস্কারের সুপারিশকে মানতে নারাজ। বিশেষত উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখার পক্ষে তারা জোর দাবি জানিয়েছে।

তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) জানিয়েছে, উপসচিব পদে ৫০:৫০ কোটা বাস্তবায়ন করলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বাসার দাবি, যুগোপযোগী সিভিল প্রশাসন গড়তে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের অভিযোগ

স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

তারা দাবি করেছেন, প্রশাসন ক্যাডার তাদের নিজস্ব নিয়মে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি ও সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করেছে। অথচ স্বাস্থ্য ক্যাডারে এই সুযোগ নেই।

বিশেষত বিদেশি প্রশিক্ষণ, উচ্চতর গবেষণা এবং চাকরির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার বেশি সুবিধা পায়।

শিক্ষা ক্যাডার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মর্যাদা বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।

শিক্ষা ক্যাডারের ৪র্থ ও ৩য় গ্রেডের কর্মকর্তারাও প্রটোকলে প্রশাসন ক্যাডারের তুলনায় অবমূল্যায়িত হন।

এ অবস্থায় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংস্কার এবং গ্রেডভিত্তিক সমতা আনতে দাবি তুলেছেন তারা।

উপসচিব পদে পরীক্ষার প্রস্তাব

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক পরীক্ষা দিতে হবে।

প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশও করা হয়েছে।

কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তারা বলছেন, ১৯৯৮ সালের গেজেট অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ কোটা বৈধ।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করলে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য কমবে।

জনপ্রশাসন সংস্কারের ভবিষ্যৎ

জনপ্রশাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন করা একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।

ফিরোজ মিয়া বলেন, সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে দুর্নীতি দূর করা এবং চাকরির রাজনীতিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।

তবে ক্যাডার বৈষম্য নিয়ে জনপ্রশাসনে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা সহজে সমাধান হবে না।

সংস্কারের মাধ্যমে জনসেবা সহজলভ্য করার পরিবর্তে কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

এতে সাধারণ জনগণের সেবার প্রশ্ন উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন