বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার ঝুঁকি নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তরুণদের উদ্যম এবং পক্ষপাতহীনতার ওপর ভরসা রেখে তিনি বলেছেন, “তারা দেশকে নতুন করে গড়তে চায়।”
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এই আশ্বাস দেন।
সাক্ষাৎকারটি সম্প্রতি ইকোনমিস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর নতুন যাত্রাকে কেন্দ্র করে দেশটি ২০২৪ সালে ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয়েছে।
বাংলাদেশকে বর্ষসেরা নির্বাচনের কারণ হিসেবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
এই অর্জন এবং দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস।
তরুণদের উদ্যমে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন
ড. ইউনূস তরুণদের ভূমিকা এবং উদ্যমকে বাংলাদেশের নতুন যাত্রার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “ছাত্রদের কারণেই গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে, এবং আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।”
তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় পক্ষপাত নেই উল্লেখ করে তিনি তাদের উদ্যম এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থানে তরুণীরা সামনের সারিতে ছিলেন এবং তাদের ভূমিকা ছিল অনন্য।
তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন পূরণের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণ বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য।
তাদের কাজের প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, “তারা বিগত শতাব্দীর নয়, বরং এই শতাব্দীর তরুণ।”
তাদের কর্মদক্ষতা এবং চিন্তাধারাকে দেশের উন্নয়নের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
চরমপন্থার ঝুঁকি নেই: তরুণদের ওপর আস্থা
বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা ফিরে আসার ঝুঁকি নেই বলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সতর্কতার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই নিশ্চয়তা দেন।
তিনি বলেন, “দেশের তরুণেরা ধর্মের বিষয়ে পক্ষপাতহীন, এবং তারা একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে চান।”
তরুণ প্রজন্মের উদার এবং অগ্রসর মানসিকতা ইসলামি চরমপন্থার প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, “তরুণদের শক্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গি চরমপন্থাকে প্রতিহত করবে।”
তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজ গঠনে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যৎ আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তরুণদের আধুনিক এবং সৃজনশীল উদ্যোগকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন তিনি।
ব্যক্তিগত পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
বাংলাদেশের নির্বাচনের পর নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস।
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আসা তার মূল লক্ষ্য ছিল না।
ড. ইউনূস বলেন, “আমি প্যারিসে ছিলাম এবং আমার কাজ উপভোগ করছিলাম। আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে এনে ভিন্ন কিছু করতে বলা হয়।”
তিনি নিজের কাজ এবং জীবনের আগের ধারায় ফিরে যেতে চান বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি সব সময় যা করেছি, তা-ই করতে চাই।”
তার কথায় স্পষ্ট যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব তার জীবনের পরিকল্পনার অংশ ছিল না।
বাংলাদেশের উন্নয়নে তার ভূমিকা অস্বীকার করা কঠিন হলেও, তার প্রকৃত লক্ষ্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মে সক্রিয় থাকা।
ড. ইউনূসের এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে তার আশা ও প্রত্যাশা স্পষ্ট হয়েছে।
তরুণদের নেতৃত্বে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার দৃঢ় বিশ্বাস বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।