,

বাংলাদেশে আসছে ৪৭তম বিসিএস, বদলাচ্ছে কোটার কাঠামো?

কোটা সংস্কার, বয়সসীমা এবং পরীক্ষার সীমাবদ্ধতায় বড় পরিবর্তনের আভাস

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার সংস্কার, পরীক্ষার সুযোগ এবং বয়সসীমার বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চলেছে বর্তমান সরকার। আগামী নভেম্বরে ৪৭তম বিসিএস প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার কথা থাকলেও এর আগে কোটার কাঠামো নিয়ে চলছে জোরালো আলোচনার পর্ব।

এখনও পরিষ্কার নয়, কোটার বর্তমান কাঠামো বহাল থাকবে নাকি আসবে নতুন কোনও পরিবর্তন। তবে এসব প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে তুলে ধরা হয়েছে একাধিক দাবি এবং আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক রায়ও একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকে।

আপিল বিভাগের আদেশ এবং আন্দোলনের জোরালো দাবি

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ২১ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন। ওই রায়ে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি সাত শতাংশ কোটার আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে পাঁচ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এবং এক শতাংশ করে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাখা হয়েছে।

তবে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল যে, অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ রেখে কোটার কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে। এমনকি, কোটার পাশাপাশি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিও উঠেছে।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং পরীক্ষা দেয়ার সীমাবদ্ধতা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের একটি বড় অংশ ছিল। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, ২৪শে অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সর্বাধিক তিনবার নির্ধারণ করা হয়।

তবে, পরবর্তী সময়ে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সরকার জানায় যে, চাকরিপ্রার্থীরা চারবার পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন এলেও আন্দোলনকারীদের আরও কিছু দাবি রয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

কোটার পরিবর্তন আসছে?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল যে, কোটার পরিমাণ যেন সর্বাধিক পাঁচ শতাংশেই সীমাবদ্ধ থাকে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সাত শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে, আন্দোলনকারীরা বলছেন, কোটার পরিমাণ ৯৩ শতাংশে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং পঞ্চাশ শতাংশে কোটা বরাদ্দ রাখাই তাদের দাবি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, “আমাদের দাবি পাঁচ পারসেন্ট কোটা রাখা। সরকারের এই সাত শতাংশ কোটার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে আমাদের দাবি পূরণ করে না। আমরা আমাদের দাবিতে অটল রয়েছি এবং এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।”

কোটার পুরনো কাঠামো ও বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা এবং অন্যান্য অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য পৃথক কোটা ছিল। তবে এই কোটার পরিমাণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের তুলনায় বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়।

২০১৮ সালে কোটার সংস্কার নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হলে সরকার কোটার ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসময় সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ এবং নতুন প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষা

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য ৩,৪৬০টি পদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং প্রজ্ঞাপন আগামী নভেম্বরে জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এস. এম. মতিউর রহমান।

তবে এই পরীক্ষার জন্য কোটার বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার কী পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত মেনেই এই বিসিএস পরীক্ষায় কোটার পরিমাণ নির্ধারণ করবে নাকি আসবে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত—এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

আগামী বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ আরও একবার বাড়লো

বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, বিসিএসে পরীক্ষার্থীরা সর্বাধিক চারবার অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। পূর্বে তিনবারের বেশি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যেত না, তবে সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের চাপের প্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, কোটার সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল পাঁচ শতাংশ কোটা বরাদ্দ এবং বাকি অংশ সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা।

এই দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশা যে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি সর্বমহল গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায্য কাঠামো গঠন করবে।

আরও পড়তে পারেন