দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা শ্রীলংকা এবং অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের পুঁজিবাজার ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতিবাচক সূচক সত্ত্বেও পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক রেকর্ড ১ লাখ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গত বছর ১৬ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন নিয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে ছিল।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা এবং বাজার মূলধনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় নাজুক।
জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধনে বাংলাদেশ সবার নিচে
বাংলাদেশে জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধনের হার মাত্র ৬.৬ শতাংশ, যা এশিয়ার সবচেয়ে কম।
ভারতে এ হার ১৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১২.৪ শতাংশ, এবং শ্রীলংকায় ২২.১ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনের বাজার মূলধনও বাংলাদেশের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে ৩৬০টি কোম্পানি থাকলেও পাকিস্তানে ৫২৩ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৯৪৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ কমে আসার কারণ
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ১ শতাংশ।
অন্যদিকে, ভারতে এ হার ১২ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৫১ শতাংশ।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কম উপস্থিতি বাজারে উচ্চ মানসম্পন্ন বিনিয়োগযোগ্য পণ্যের অভাবকেই নির্দেশ করে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সুশাসন এবং স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা নেই
বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মূল মাধ্যম হিসেবে পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন যদি পুঁজিবাজার থেকে আসত, তবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যেত।
তবে, দেশের পুঁজিবাজারে নতুন পণ্য যেমন বন্ড এবং ডেরিভেটিভস যোগ করার উদ্যোগ এতদিন নেওয়া হয়নি।
শেয়ার বাজারে সুশাসনের ঘাটতি
২০১০ সালের ধসের পর থেকে পুঁজিবাজার সুশাসনের অভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসি এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদ্যোগ কার্যকর হয়নি।
গত ১৫ বছরে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
পরিকল্পনা কই?
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন আনতে কার্যকর নীতিমালা এবং সুশাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া প্রয়োজন।