,

বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ

বাংলাদেশের সরকারি ঋণের পরিমাণ গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এর মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল বাকি অংশ।

রাজস্ব আহরণ ও বৈদেশিক আয়ের তুলনায় ঋণের এ পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা না হলে ভবিষ্যতে আর্থিক সংকট আরও গভীর হতে পারে।

ঋণের প্রবৃদ্ধি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি এবং বিদেশি ঋণ ছিল ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।

গত দেড় দশকে বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ঋণের পরিমাণ।

২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না হওয়ায় ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আরও জটিলতা বাড়িয়েছে।

জিডিপি ও রাজস্ব আহরণের তুলনায় ঋণ

জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।

এছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ও প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না।

অন্যদিকে, সরকারের ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে রাজস্ব আয়ের সিংহভাগই ঋণ এবং ঋণের সুদ পরিশোধে চলে যাচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল বৈদেশিক আয়ের ৯৯ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে ১৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

অভ্যন্তরীণ ঋণও রাজস্ব আয়ের তুলনায় আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণ কম থাকলেও রাজস্ব সংকটের কারণে ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে।

সুদ পরিশোধে রেকর্ড ব্যয়

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় সর্বোচ্চ হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

চলতি অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হতে পারে।

এতে শুধু সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার জরুরি

অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলছেন, ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার না হলে পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাবে।

যেসব প্রকল্পে ঋণের অর্থ ব্যয় হচ্ছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

অন্যথায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ভার আরও সংকট সৃষ্টি করবে।

সরকারের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তারা বলছে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়তে পারেন