বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির গভীর চিত্র সামনে এসেছে।
৩৪৩ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের জালে ধরা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
সরকার পতনের পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে গিয়ে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর তদন্তে এ প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
এই তালিকায় এস আলম, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ বিভিন্ন বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম রয়েছে।
পাশাপাশি, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের সম্পৃক্ততাও উঠে এসেছে।
পাচারের পরিমাণ
তদন্তে উঠে এসেছে, এস আলম একাই চারটি ব্যাংক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন।
বেক্সিমকো গ্রুপ নামে বেনামে ৬০ হাজার কোটি টাকা বের করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাসা গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বের করেছে।
তদন্তকারীরা জানান, এই অর্থ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
এগুলোর চূড়ান্ত হিসাব ও অডিট এখনো সম্পন্ন হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত তিন মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) ৩৪৩ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
এ অ্যাকাউন্টগুলোতে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরানোর চেষ্টা
বিএফআইইউ জানিয়েছে, পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে ২২৫টি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এসব প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে।
২০টি বড় গ্রুপের বিদেশে থাকা সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এস আলম ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানায়, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে ১৭৭টি দেশের সঙ্গে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্টের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
স্বৈরাচারী সরকারের উত্তরাধিকার
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পর ব্যাংক খাতে দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেন।
তিনি বলেন, “টাকা পাচারকারীদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না।”
সরকার পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিচ্ছে।
বিএফআইইউ জানায়, গত কয়েক মাসে পাচার হওয়া টাকার একটি বড় অংশের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
এক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করায় তদন্তের গতি বেড়েছে।
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে নতুন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এই টাস্কফোর্স ইন্টারপোল ও বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় কাজ করবে।
তদন্তকারীরা মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নেয়া গেলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো সম্ভব।
এছাড়া, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুর্নীতির ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়েছে।
তারা মনে করেন, দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।