র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব
,

বদলে যাচ্ছে ঢাকার অপরাধ জগৎ

ঢাকা শহরের অপরাধ জগতে দ্রুত বদলে যাচ্ছে চিত্র।

রাজধানীজুড়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

অপরাধ প্রবণতা শুধু অলিগলিতে সীমাবদ্ধ নয়; সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোও এই চক্রের আওতায় পড়ছে।

পুরনো অপরাধ চক্রের পাশাপাশি নতুন গ্যাং তৈরির প্রবণতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

আলাপের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ।

ছিনতাইকারীদের বাড়তি তৎপরতা

রাজধানীতে ছিনতাই এখন একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রায়ই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তবে কিছুদিনের মধ্যেই তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার একই কাজে জড়াচ্ছে।

নগরবাসী বলছেন, সন্ধ্যার পর রাস্তায় চলাফেরা করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ ও র‍্যাবের একাধিক টিম ছিনতাই প্রতিরোধে কাজ করছে।

তবু ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ এখনো নজরদারির বাইরে রয়ে গেছে।

চাঁদাবাজির বাড়বাড়ন্ত

চাঁদাবাজি ঢাকার অপরাধ জগতের আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফুটপাথের ব্যবসা পর্যন্ত এই চাঁদাবাজির আওতায়।

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও এই চক্রের প্রভাব স্পষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে চাঁদাবাজরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও এই চক্রকে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে শহরের পুরো এলাকাজুড়ে এই চক্রের কার্যক্রম এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য

ঢাকায় কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরীর অলিগলিতে গ্যাং সদস্যদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও গ্যাং সদস্যরা এখন প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করছে।

পুলিশ বলছে, কিশোর অপরাধীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্য।

তারা মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাং সদস্যদের পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও অপরাধী গোষ্ঠীর মদদ রয়েছে।

সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্যাং কালচার নির্মূলের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ফিরে আসা

জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাইরে রয়েছে অন্তত ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী।

তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং পুরনো অপরাধ চক্রকে পুনরায় সক্রিয় করে তুলছে।

কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় প্রায় ২,২০০ বন্দি কারাগার থেকে পালিয়েছে।

তাদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা গেলেও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবস্থান এখনো অজানা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন ও নজরদারি নিশ্চিত করতে সরকারের স্পষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ঢাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

আরও পড়তে পারেন