,

বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে আবারও সক্রিয় দুদক

নতুন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র পাঁচ দিনেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গতি ফিরেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজে।

১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া পাঁচ কর্মদিবসে দুদক অন্তত ২০টি মামলা করেছে এবং ১০০ জনের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে।

সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি, অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি।

অভিযানের অংশ হিসেবে ২৯টি সরকারি অফিসে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে।

এছাড়া, প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দুদকের প্রতিরোধ শাখার মহাপরিচালক মো. আখতার হোসেন বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং কারো প্রতি বিশেষ সুবিধাও দেখানো হবে না।

কমিশনের কার্যক্রম এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কার্যত স্থগিত ছিল নতুন চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের নিয়োগ না হওয়ায়।

১১ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, “বড় দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরু করা হবে, কারণ এটি জনগণের প্রত্যাশা।”

উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা

১২ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ প্রায় ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক, সদান চন্দ্র মজুমদার এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং জুনাইদ আহমেদ পলকও অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন।

অন্যান্য অভিযুক্তের মধ্যে আছেন সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন-অর-রশিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।

এছাড়া, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নতুন দুর্নীতির অভিযোগগুলোর দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে কমিশন।

অভিযোগের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও আছেন, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অন্তত ৮০,০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ।

তালিকায় রয়েছেন শেখ রেহানার মেয়ে তুলিপ সিদ্দিকও।

অভিযুক্ত অন্যান্যদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক আইএফআইসি ব্যাংক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।

এছাড়া, বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

পাঁচ দিনের অভিযানের অংশ হিসেবে দুদক অন্তত ৩০ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মুজিবুল হক এবং শাহরিয়ার আলম।

অন্যদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য নূরনবী চৌধুরী শাওন, আবু জাহির এবং আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

দুদকের অভিযানে সরকারি অফিস যেমন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পাসপোর্ট অফিস এবং ভূমি অফিস লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “নতুন কমিশন পুরোনো সব লম্বিত মামলা এবং তদন্তকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদকের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল।

তারা আরও মনে করেন, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাব মুক্ত করে কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

আরও পড়তে পারেন