পাঠ্যপুস্তক
,

প্রাথমিক শিক্ষায় ১১ ধরনের স্কুল, পাঁচ রকমের কারিকুলাম

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় একমুখী ব্যবস্থা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

সরকারি পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও দেশে এখনো ১১ ধরনের স্কুল এবং পাঁচ রকমের কারিকুলাম চালু রয়েছে।

শিক্ষায় বৈচিত্র্য ও বৈষম্য

বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন, এবতেদায়ি মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যমসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সরকারি কারিকুলাম মান্য করা হলেও বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো অতিরিক্ত বিষয় পাঠ করায়।

এদিকে কওমি মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যম পুরোপুরি নিজস্ব কারিকুলাম অনুসরণ করে।

ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং সামাজিক সাম্যতায় বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রাথমিক পর্যায়ের এ বৈচিত্র্য শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলে।

এটি সামাজিক বৈষম্যকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

পাঁচ ধরনের কারিকুলামের বাস্তবতা

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঁচ ধরনের কারিকুলাম চালু রয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়।

এবতেদায়ি মাদ্রাসা ও উচ্চ মাদ্রাসাসংলগ্ন এবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোতে রয়েছে ধর্মভিত্তিক কারিকুলাম।

কওমি মাদ্রাসায় ইসলামিক জ্ঞানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো আন্তর্জাতিক কারিকুলাম মানে।

জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুযায়ী একমুখী শিক্ষার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

শিক্ষার্থীদের দক্ষতার পার্থক্য

প্রতিষ্ঠানের ধরনভেদে শিক্ষার্থীদের পঠন এবং গাণিতিক দক্ষতায় পার্থক্য স্পষ্ট।

প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে।

গণিতে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের গড় স্কোর ৯.৫, যেখানে সরকারি স্কুলের গড় স্কোর ৮.২।

বাংলা পঠনের ক্ষেত্রেও একই রকম পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পার্থক্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলে।

একমুখী শিক্ষার দাবি

শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম মনে করেন, প্রাথমিক পর্যায়ের বিভাজন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ দক্ষতাকে প্রভাবিত করে।

তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একমুখী এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করা জরুরি।

শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও একই দাবি উঠেছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, একমুখী শিক্ষার অভাবে জাতীয় দক্ষতামানে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষায় বৈষম্য কমাতে বিনামূল্যে শিক্ষা ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের পরিকল্পনায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা এবং নবম শ্রেণীতে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছে।

তবে এর বাস্তবায়নে এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

আরও পড়তে পারেন