পাঠ্যপুস্তক
,

প্রাথমিকে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা: ২০ হাজার নতুন শিক্ষক, মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশাল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এ পরিকল্পনার আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি, মিড-ডে মিল চালু এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের নতুন ব্যবস্থা চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নতুন ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ

দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নতুন করে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির কাজ চলছে।

এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে।

এই পদগুলো সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

তাছাড়া, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য ৫ হাজার ১৬৬টি এবং চারুকলার জন্য ৫ হাজারের বেশি নতুন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে।

শিক্ষকদের এই পদায়ন অঞ্চলভিত্তিক হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সংগীত এবং চারুকলার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার

মিড-ডে মিলের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার প্রদানের পরিকল্পনা পুনরায় গ্রহণ করেছে সরকার।

এবারের মিড-ডে মিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ডিম, দুধ, পাউরুটি, কলা এবং মৌসুমি ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার।

এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিলে খিচুড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

তবে সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অপুষ্টি কমবে এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালুর পরিকল্পনা

পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন শেষে ২০২৫ সাল থেকে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার কারণে বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছিল।

২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এই পরীক্ষা চালু করা হলেও পরবর্তীতে সেটি স্থগিত করা হয়।

এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নতুন নিয়ম নির্ধারণ করা হতে পারে।

মূল্যায়নে চার স্তরের ব্যবস্থা

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনা হচ্ছে নতুন ধারা।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় চার স্তরের মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে।

৩৯ নম্বর পর্যন্ত ‘সহায়তা প্রয়োজন’, ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত ‘সন্তোষজনক’, ৬০ থেকে ৭৯ পর্যন্ত ‘উত্তম’, এবং ৮০ থেকে ১০০ নম্বর ‘অতি উত্তম’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত দুর্বলতা নির্ণয় করা সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্কুল ভবন এবং শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট

সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোকে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত শিশু কল্যাণ ট্রাস্টকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই ট্রাস্টের অধীনে পথশিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলোকে কার্যকর করার জন্য নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষাবিদদের প্রশংসা

এই উদ্যোগগুলোর জন্য সরকারের প্রশংসা করেছেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী।

তিনি বলেছেন, “প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।”

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হবে যদি তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।

বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি

চলতি বছর থেকেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে স্কুলগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এ উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নেওয়ার একটি ধাপ হিসেবে বার্ষিক পরীক্ষা বিবেচিত হচ্ছে।

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য এই উদ্যোগগুলো কার্যকর এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন