,

প্রবাসীদের ভোটাধিকার: পোস্টাল ব্যালট কার্যকর নিয়ে সংশয়

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা কার্যকরের দাবি উঠলেও এটি এখনো অনিশ্চিত।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে এ বিষয়ে আস্থা না থাকায় কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।

কমিশনের একাধিক সদস্য মনে করছেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মতো এ ব্যবস্থাতেও বিতর্ক তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পোস্টাল ব্যালট কার্যকর না হলে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

এছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, কারাবন্দী এবং নিজ এলাকায় না থাকা ভোটাররাও ভোট দিতে পারবেন না।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আগ্রহ কম

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে কমিশন অনলাইনে বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও এতে পর্যাপ্ত সাড়া মেলেনি।

কমিশনের ফেসবুক পেজে আবেদন আহ্বান জানানো হলেও প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া ছিল কম।

১৪ নভেম্বর এবং ২১ নভেম্বর দু’বার আহ্বান জানানো হলেও অনলাইন বৈঠকের নিবন্ধন সংখ্যা ছিল মাত্র ৯০।

প্রবাসীদের নিরুৎসাহিত অংশগ্রহণ কমিশনের পরিকল্পনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের সদস্য এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস জানুয়ারিতে দেশে ফিরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলে জানা গেছে।

পোস্টাল ব্যালট কার্যকরে প্রতিবন্ধকতা

পোস্টাল ব্যালট কার্যকরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থার অভাব।

নির্বাচন কমিশনের মতে, ইভিএমের মতো পোস্টাল ব্যালটেও মানুষের আস্থা অর্জন কঠিন হতে পারে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোটারদের সরাসরি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তবে পোস্টাল ব্যালটের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে ভোটারকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালটের জন্য আবেদন করতে হয়।

এরপর ডাকযোগে ব্যালট পেপার প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দের পর পাঠানো হয়।

ভোট দিয়ে সেটি সিলগালা করে ডাকযোগে ফেরত পাঠাতে হয়, যা নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাতে হয়।

এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনেক সময় কার্যকর নয় বলে মনে করেন কমিশনের কর্মকর্তারা।

পূর্বের উদ্যোগগুলোর ব্যর্থতা

পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা কার্যকর করতে একাধিক নির্বাচন কমিশন নানা পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১৪ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশন অনলাইনে ভোট ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবলেও সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রবাসীদের জন্য ভোট ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছিলেন।

কিন্তু এই উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি।

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন পোস্টাল ব্যালট সংস্কারের কাজ শুরু করেছিল।

তারা নাগরিকদের জন্য অনলাইনে ব্যালট ডাউনলোডের পরিকল্পনা নিয়েছিল।

তবে পরবর্তী কমিশন এ উদ্যোগ নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি।

পোস্টাল ব্যালটের বিকল্প ভাবনা

পোস্টাল ব্যালটের বিকল্প পদ্ধতি চালুর বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব উঠলেও তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই।

নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চললেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

প্রতিটি ভোটারের জন্য অনলাইনে নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে ব্যালট ডাউনলোডের প্রস্তাব ছিল একটি সম্ভাব্য উদ্যোগ।

ভোটাররা পছন্দের প্রতীকে টিক চিহ্ন দিয়ে ব্যালট ডাকযোগে পাঠানোর সুযোগ পেতেন।

তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।

আরও পড়তে পারেন