বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের যে কোনো প্রচেষ্টা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শহীদ। পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।’
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তার আন্দোলনের এক দফা দাবির পুনরাবৃত্তি করেন।
আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সমঝোতা নয়
‘পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের যে কোনো প্রচেষ্টাকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে,’ বলেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি অভিযোগ করেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ ব্যাক ডোর সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, ‘যারা সমঝোতার রাজনীতি শুরু করেছেন, তারা জানেন না যে জনগণ আপনাদের আর বিশ্বাস করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, সেটি জনগণের রক্ত ও আত্মত্যাগের ফসল।
‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রশ্নে যারা নীরব, তারা এই আত্মত্যাগকে অস্বীকার করছেন।’
‘গণমাধ্যমকে জনগণমুখী হতে হবে’
আলোচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন হাসনাত।
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে গণমাধ্যমকে গণভবনের দিকেই ঝুঁকে থাকতে দেখা গেছে। তারা জনগণের কথা বলার সাহস হারিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম যেটা সরকারের পক্ষে বলেছে, সেটাকে বলা হয়েছে প্রেস রিলিজ। আর যেটা সরকার শুনতে চায়নি, সেটাই প্রকৃত সংবাদ।’
তিনি গণমাধ্যমকে ভবিষ্যতের জন্য জনগণমুখী হওয়ার আহ্বান জানান।
‘আগামী দিনে গণমাধ্যম যদি জনগণের স্বার্থে কথা বলে, তাহলে সেটিই হবে প্রকৃত সাংবাদিকতা।’
‘ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ ছাড়া গ্রহণযোগ্যতা নেই’
হাসনাত আবদুল্লাহ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো রেখে যে কোনো নির্বাচন হবে অর্থহীন। ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ ছাড়া গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনকে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। জনগণ আর কোনো ছলচাতুরী মেনে নেবে না।’
জাতির জন্য আরও ত্যাগ স্বীকারের প্রতিজ্ঞা
আলোচনায় মহাখালীতে নিহত জাহিদ হোসেনের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন আবেগঘন বক্তৃতা দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দেশের জন্য এক ছেলেকে দিয়েছি। প্রয়োজনে আরেক ছেলেকেও দেব। যদি দরকার হয়, আমিও যাব।’
তার এই বক্তব্যের প্রশংসা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই বাবা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে আমাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় ফেরার জন্য পেছনের দরজা দিয়ে সমঝোতা করছে, তারা এই বাবার বক্তব্য নোট করে রাখুন।
‘যারা জনগণের রক্তকে উপেক্ষা করে সমঝোতা করবে, তারা ইতিহাসের কাঠগড়ায় অভিযুক্ত হবে।’
‘নতুন বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব’
আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
লেখক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমাদের দায়িত্ব নতুন ধরনের নেতৃত্ব গড়ে তোলা। পুরনো কাঠামো আর টিকবে না।’
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এই দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে তরুণদের নেতৃত্বে আনতে হবে। তাদের হাতেই ভবিষ্যৎ।’
আলোচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘যারা নতুন বাংলাদেশ চায়, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একা কেউ কিছু করতে পারবে না।’
ভবিষ্যতের করণীয়
বক্তারা সবাই একমত যে আওয়ামী লীগের বিচার এবং ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ। এখানে অন্যায়ের কোনো জায়গা থাকবে না। গণতন্ত্রই হবে সবকিছুর ভিত্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই লক্ষ্যকে ধারণ করবে না, তাদের জন্য আমাদের কোনো জায়গা নেই। পেছনে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’
‘আমরা শহীদ হয়েছি। আমাদের রক্ত বৃথা যাবে না।’