সরকার পতনের পর পুলিশের অস্ত্রভাণ্ডার লুট, বেড়েছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করেছে বলে জানাচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
জানা গেছে, সারাদেশে সন্ত্রাসী গ্যাং ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ হাত বদলের মাধ্যমে চলে গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন।
সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে ইসরায়েলের তৈরি অত্যাধুনিক উজি পিস্তলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা এই অস্ত্র পাচারের বিষয়টিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
গোয়েন্দাদের মতে, এই লুট হওয়া অস্ত্রের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
কীভাবে লুট হলো অস্ত্র?
গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন, কারাগার ও বিশেষ বাহিনীর অস্ত্রাগার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছয় লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি গোলাবারুদ লুট হয়।
এর মধ্যে চার হাজার ২৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং তিন লাখ ৮৮ হাজার ১৮২টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে এখনও উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৫৪৬টি অস্ত্র ও ৩২টি ভারী অস্ত্র। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর জানান, লুট হওয়া অস্ত্রের ৭৫ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে এবং ৬০ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, “অপরাধ দমনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে শতাধিক অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে রাতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। প্রায় ৩০০ মোটরসাইকেল টহল টিম রাত ১০টার পর থেকে টহলে নামছে।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর অভিযানও চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্ত্রের বিস্তার
গোয়েন্দারা বলছেন, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে এই লুট হওয়া অস্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মোহাম্মদপুর, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্যাংগুলো এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে অপরাধের হার বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং ছিনতাই বেড়েছে
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের নিয়মিত টহল কমে যাওয়ার সুযোগে সন্ধ্যার পর থেকেই ছিনতাইকারী গ্যাংগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত তিন মাসে ছিনতাইকারীদের আক্রমণে অন্তত চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাই প্রতিরোধে টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
লুট হওয়া অস্ত্র কি পুনরুদ্ধার সম্ভব?
বিভিন্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আরও তৎপর হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লুট হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পুনরুদ্ধার করা না গেলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
পুলিশের সাবেক আইজির মতে, “রাতে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে এবং পুলিশের জনবল ও মনোবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে, নতুবা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে।”