সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২০টি থানা, ৫৮টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়
গত জুলাই-আগস্ট মাসে সারা দেশে থানাসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এই সহিংসতায় ১২০টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ৫৮টি থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
লুটপাট হয়েছে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
প্রায় ৬৩৯টি থানার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর বেশিরভাগ কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
ডিএমপির ২১টি থানায় ভাঙচুর, ১৩টিতে অগ্নিসংযোগ
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ৫০টি থানার মধ্যে ২১টি থানায় সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে ১৩টি থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
লুটপাট করা হয় অস্ত্র, মামলার নথিপত্র, পোশাক, গাড়ি, এমনকি হাঁড়ি-পাতিলও।
অগ্নিসংযোগের ফলে গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।
উত্তরা পূর্ব থানা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ অন্যান্য থানাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সহিংসতার শিকার পুলিশ: নিহত ৪২, আহত কয়েকশ
৫ আগস্টের সহিংসতায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ সদস্য।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫০৭ জন আহত পুলিশ সদস্য।
যদিও নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল।
লুটপাট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, কার্যক্রমে বিঘ্ন
লুট হওয়া বিপুল সংখ্যক অস্ত্রের বেশিরভাগ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ কারণে পুলিশ সদস্যরা কার্যক্রমে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিশেষত মব কন্ট্রোল বা ভিড় নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরা।
অগ্রিম তথ্য পাওয়ার পরও সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে।
থানাগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি: ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কাজ
অধিকাংশ থানার ভেতরে এখনো ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রয়ে গেছে।
মিরপুর মডেল থানায় ৬৬০টি মামলার নথি এবং ২৩২টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে।
মোহাম্মদপুর থানায় পুড়ে গেছে ৮৯টি মামলার নথি।
শেরেবাংলা নগর থানায় সব নথিপত্র ও দেড় শতাধিক মামলার আলামত ধ্বংস হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোতে পুনর্গঠন ও মেরামতের কাজ চলছে।
পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ
নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা চেয়েছেন।
অন্তবর্তী সরকার সাবেক ডিআইজি শেখ সাজ্জাত আলীকে চুক্তিভিত্তিক ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে চাঁদাবাজি বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের সংস্কার ও জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই সংকট কাটানো কঠিন।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা মন্তব্য করেছেন, পুলিশের মধ্যে সামরিকীকরণের ফলে এই বিপর্যয় ঘটেছে।
পুলিশে সংস্কারের পাশাপাশি স্থানীয় সমাজপতিদের সহযোগিতা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।