বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য পলাতক রয়েছেন।
এই পলাতক সদস্যদের বিরুদ্ধে বেতন-ভাতা বন্ধের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
তাঁদের গ্রেপ্তারে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম এবং তাঁদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
পলাতক পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ও পদের বিবরণ
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পলাতক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ১ জন ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
পলাতক কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্যও রয়েছেন।
এই সদস্যদের অনেকেই কাজে যোগদানের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেও দায়িত্ব পালন শুরু করেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের বড় একটি অংশ দেশের বাইরে, বিশেষত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
শীর্ষে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নাম
পলাতক পুলিশ সদস্যদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা রয়েছে।
তাঁর সঙ্গে আরও রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, খন্দকার নুরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায় এবং সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
এদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বেতন-ভাতা বন্ধ এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তাঁদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে।
একজন পলাতক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সর্বশেষ তিনি আগস্ট মাসে বেতন পেয়েছেন।
এরপর তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে যায় এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, যেসব সদস্য পলাতক এবং কোনো স্টেশনে যোগদান করেননি, তাঁরা আর কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেছেন, বরখাস্তকৃত সদস্যরা অর্ধেক বেতন পেলেও পলাতকরা কিছুই পাচ্ছেন না।
গ্রেপ্তার অভিযান ও বিশেষ টিম
পলাতক পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ কমিটি।
এই কমিটি পলাতক সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা, বেতন-ভাতা বন্ধ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা তদারকি করছে।
তাঁদের গ্রেপ্তারে আলাদা একটি টিম কাজ করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই কর্মকর্তারা যাতে বিদেশে পালাতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট বাতিলের কাজ শুরু হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
‘পলাতকরা এখন সন্ত্রাসী’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যাঁরা আর পুলিশ বাহিনীতে নেই, তাঁরা এখন সন্ত্রাসী।
তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমনকি তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই সহিংসতায় ৪৬ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
থানা এবং অন্যান্য পুলিশ স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
এসব ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে পৃথক তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, পলাতক সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
পলাতকদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
পুলিশ বাহিনীর এই উদ্যোগের মাধ্যমে পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং তাদের দোষ প্রমাণে আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
এই ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
বেতন বন্ধ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং পাসপোর্ট বাতিলের কারণে তাঁদের দেশে এবং বিদেশে চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
পুলিশের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই ঘটনাগুলো থেকে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে, এই সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে বাহিনীর শৃঙ্খলা এবং কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকার এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করছে, যে কোনো ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গ কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।