বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করে আংশিক বাতিল করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় প্রদান করে।
এই রায়ের ফলে দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হলো।
পাশাপাশি গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের বিধান যুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস করা হয়েছিলো।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে গত ১৮ আগস্ট সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট দায়ের করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেছিল।
পঞ্চদশ সংশোধনীর বাতিলকৃত অংশ
হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনী থেকে বেশ কিছু বিষয় বাতিল হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিধান।
এই সিদ্ধান্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আইনি বাধা দূর করেছে।
পাশাপাশি সংবিধানের ৭ এর ‘ক’ ও ‘খ’ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে।
এই অনুচ্ছেদগুলো কর্তৃত্ববাদী সরকারের ভিত্তি হিসেবে সমালোচিত হয়ে আসছিল।
এছাড়া গণভোটের বিধান ফেরানো হয়েছে, যা সংবিধান সংশোধনে জনগণের প্রত্যক্ষ মতামত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করবে।
রায়ের পর রিটকারীদের একজন বদিউল আলম মজুমদার একে “গণতন্ত্রে পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচন” বলে উল্লেখ করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না, তবে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।”
গণতন্ত্রের পথে নতুন সম্ভাবনা
পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিধান বাংলাদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
সমালোচকরা দাবি করেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
রিটকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই রায় গণতন্ত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
তবে এটি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ ও ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ওপর।
বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, “গণতন্ত্রের পথে পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।”
তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান।
পাশাপাশি তিনি বলেন, “গণভোটের বিধান সংযোজন গণতন্ত্রকে জনগণের নিকটবর্তী করবে।”
হাইকোর্টের এই রায়কে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বাস্তবতা তৈরি করতে পারে।