জাতীয় সংস
,

পঞ্চদশ সংশোধনীর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ধ্বংস করা: অ্যাটর্নি জেনারেল

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপে গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়েছে বলে মত তার

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে বিতর্ক উত্তপ্ত হচ্ছে।

বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এই সংশোধনীর ফলে দেশকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখানে গণতন্ত্র ও আইনশাসন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্যে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে জাতির মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভক্তির প্রতিফলন দেখা দিয়েছে।

‘পঞ্চদশ সংশোধনী গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে’

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো দাবি করেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।

তিনি বলেন, “এটি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং দেশের জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে আঘাত। এই সংশোধনী জাতির মৌলিক অধিকার হরণ করেছে এবং একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বাস্তবায়িত হয়েছে।”

এ বিষয়ে তার ভাষ্য ছিল, “আমাদের জাতি ইতিহাসের বিভিন্ন সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, কিন্তু এই সংশোধনী গণতন্ত্রের স্পিরিটকে হত্যা করেছে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে।”

জাতির পিতা সংক্রান্ত বিতর্কে বিভক্তির শঙ্কা

শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবিধানে জাতির পিতা হিসেবে সংযোজন করার বিষয়েও আপত্তি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মূল সংবিধানে জাতির পিতার উল্লেখ ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে জাতির পিতা হিসেবে সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছে। এটি জাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দেশে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক বিতর্ক রয়েছে। এক ব্যক্তিকে এভাবে সাংবিধানিকভাবে তুলে ধরলে সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।”

এই বক্তব্যে বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্মতি প্রকাশ করে বলেছেন, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল।

সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে বিভক্তি

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ রাখা উচিত কি না সে বিষয়েও মতামত প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, “এই দেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম, সুতরাং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস থাকা উচিত। ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে রাখা অনুচিত।”

ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে তিনি বলেন, “যেভাবে পূর্বে ছিল, সেভাবেই আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা সংবিধানে রাখা উচিত।”

অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরও এ বিষয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

গণভোট এবং সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান বিলোপের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, “সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের মতপ্রকাশের গণভোটের বিধান ছিল। এই গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, জনগণের ইচ্ছার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে এই বিধানটি বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন