বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথম দিকের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
একই সঙ্গে তিনি একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এই কমিশনের কাজ হবে নির্বাচনের জন্য জরুরি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ কী
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আগামী মাস থেকেই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এই কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কাজ করবে।
এটি রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত করবে।
অধ্যাপক ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি নিজেই এই কমিশনের প্রধান থাকবেন।
তার সঙ্গে সহ-সভাপতি হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই কমিশনের মূল কাজ হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা।”
তিনি আরও জানান, ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেলে ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করবে।
নির্বাচনের সময় এবং প্রস্তুতি
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জানান, নির্বাচনের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি।
তিনি বলেন, “যদি নির্বাচনের জন্য সীমিত সংস্কারই যথেষ্ট হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।”
কিন্তু যদি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে।
এর আগে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, নির্বাচনের জন্য অন্তত ১৮ মাস লাগতে পারে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, “নির্বাচনের জন্য আমরা যথাসম্ভব দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্বীকারোক্তি
দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি স্বীকার করেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি।
তবে তিনি দাবি করেন, বাজারে সরবরাহ বাড়ানো এবং শুল্ক ছাড়ের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, “চাঁদাবাজি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জিনিসপত্রের দাম আরও কমবে।”
আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
ব্যাংক খাত ও দুর্নীতি
ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কাজ চলছে বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, “কোনো ব্যাংক বন্ধ করতে হয়নি। দুর্বল ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
লুটপাট হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি বলেন, “প্রায় অর্ধেক উন্নয়ন বাজেট লুটপাট হয়েছে।”
এই অর্থ দেশের জনগণের, যা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘গুম কমিশন’ এবং স্বৈরশাসকদের বিচার
গুম কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটি এক ভয়াবহ দলিল।
তিনি বলেন, “গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। তারা ভয় পাচ্ছেন, পুরোনো শাসকগোষ্ঠী যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা আরও নিষ্ঠুর হবে।”
তিনি জানান, “গণহত্যাকারীদের” বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরশাসকদের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।