বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেওয়া হবে।
বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক বিষয় নির্বাচন
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ১০টি বিষয় পড়তে হবে।
এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ধর্ম থাকবে বাধ্যতামূলক।
বাকি বিষয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমতো নির্ধারিত সংখ্যক বিষয় বাছাই করতে পারবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়গুলো বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগ বলে আর আলাদা থাকবে না।
যেমন, একজন শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি অর্থনীতি বা ইতিহাস বিষয় নিতে পারবে।
এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে বিষয় বাছাইয়ের স্বাধীনতা দেবে।
বিভাগ বিভাজনের পরিবর্তনের পেছনের কারণ
২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল।
তবে শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের কোনো স্বাধীনতা ছিল না।
সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে বাধ্য করা হয়।
শিক্ষাবিদরা তখনই বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন।
এবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়গুলো শিক্ষার্থীর ইচ্ছা অনুযায়ী করার।
বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ
নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া একটি বড় উদ্যোগ।
তবে এটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও কম নয়।
বিষয় নির্বাচনে এত বৈচিত্র্য থাকলে শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক এবং সময়সূচি নিয়ে সমস্যা হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেছেন, এই বৈচিত্র্য আনার আগে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “বাইরের দেশের ফর্মুলা হুট করে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা কঠিন। কারণ, এখানকার শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি এবং শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজন।”
বিষয় নির্বাচনে বিকল্পের সুবিধা
বিশ্বের অনেক দেশেই বিষয় নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের বিকল্প দেওয়ার প্রচলন আছে।
ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতেও এই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেবে।
তবে এটি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো এবং শিক্ষকের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারলে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “একবার এটি চালু হলে শিক্ষার্থীরা মানবিক, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য—সব বিষয়ের জ্ঞান নিয়ে এগোতে পারবে।”