জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর এবার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রেখে জানুয়ারিতে দল ঘোষণার পরিকল্পনা করছে তারা।
তরুণ নেতৃত্বের ওপর ভর করেই গড়ে উঠতে যাচ্ছে এই নতুন রাজনৈতিক দল।
গণ-অভ্যুত্থানের পর দল গঠনের উদ্যোগ
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি তখনই নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার দাবি তুলেছিল।
গণ-অভ্যুত্থানের পর তারা তাদের প্ল্যাটফর্মকে সাংগঠনিক রূপ দিতে শুরু করে।
সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে, যেখানে ৫৬ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
একই সময়ে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন জেলা সফরের মাধ্যমে তাদের কমিটি ঘোষণার কাজ শুরু করে।
তরুণ নেতৃত্বের ওপর জোর
নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বকেই সামনে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন তরুণরাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি এবং নতুন রাজনৈতিক ভাবনার যোগ্য প্রতিনিধি।
নতুন দলের নেতৃত্বে থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তবে দল ঘোষণার আগে তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দল গঠনের প্রস্তুতি
নতুন দলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থানাপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে।
ঢাকায় ইতিমধ্যে ২০টিরও বেশি থানায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যে ১৫টি জেলায় কমিটি ঘোষণা করেছে এবং বাকি জেলাগুলোতেও কাজ চলছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সূত্র জানায়, জানুয়ারির মধ্যেই দেশের সব জেলায় কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হবে।
নতুন দলের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
নতুন রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হবে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।
তারা বলছেন, এই দল হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাজনৈতিক বন্দোবস্তে পরিবর্তন আনা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কাজ করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, পুরনো রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন করে নতুন ভাষা ও ভাবনা নিয়ে কাজ করবে তাদের দল।
তারা আরও জানান, শহীদ পরিবারের সদস্য, নারী, সংখ্যালঘু, কৃষক, শ্রমিক এবং বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নতুন দলটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রেশার গ্রুপের ভূমিকায় পুরনো সংগঠনগুলো
নতুন দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি আলাদাভাবে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বজায় রাখতে এবং জনগণের দাবিকে সামনে আনতে এই সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জনসমর্থন বাড়াতে প্রচার কার্যক্রম
নতুন দল গঠনের আগে জনসমর্থন নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জেলাভিত্তিক সফর চালাচ্ছেন।
তারা বলছেন, তরুণ নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক চেতনার মাধ্যমে জনগণকে আকৃষ্ট করাই তাদের লক্ষ্য।
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকেও স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তরুণ সমাজ নতুন রাজনৈতিক শক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে নতুন দল
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তারা মনে করেন, তরুণ নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক ভাবনা দেশের রাজনীতিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে, দলের টিকে থাকার জন্য সংগঠনের শক্ত ভিত্তি এবং জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির তরুণ নেতৃত্ব তাদের কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তারা জানুয়ারিতে দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে তাদের কৌশল ও জনগণের সাড়া পাওয়ার ওপর।