চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে।
এর ফলে মুঠোফোন সেবা, পোশাক, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচসহ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন খাতের ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে দুইটি অধ্যাদেশ জারি করে এই পরিবর্তন কার্যকর করা হয়েছে।
এ উদ্যোগের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণকে উল্লেখ করা হচ্ছে।
মুঠোফোন সেবার খরচ আরও বাড়ল
মুঠোফোনের সিম ও রিম কার্ড ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।
এর ফলে কথা বলার খরচ বাড়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল।
এ কারণে মোবাইল অপারেটররা ইতোমধ্যে সেবার দাম বাড়িয়েছিল, যা গ্রাহকদের বাড়তি খরচের মুখে ফেলেছে।
পোশাকের দাম দ্বিগুণ ভ্যাটের ফলে আরও বাড়বে
ব্র্যান্ডের দোকান ও বিপণিবিতান থেকে পোশাক কিনতে এখন আগের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হবে।
পোশাকের আউটলেটের ভ্যাট হার ৭.৫ শতাংশ থেকে এক লাফে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এই বৃদ্ধি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অ-ব্র্যান্ডেড দোকানগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে পোশাকের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এমনিতেই পোশাক ব্যবসা মন্দার মধ্যে ছিল।
নতুন ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে রোজার ঈদের আগেই পোশাক কেনাকাটায় ধীরগতি দেখা দিতে পারে।
রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচেও বড় প্রভাব
সব ধরনের রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এর ফলে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচ বাড়বে।
যেমন, ১ হাজার টাকার খাবারের বিলের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে।
মিষ্টির দোকানের ভ্যাটও সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করায় মিষ্টি কেনার খরচ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সারা দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেগুলোতে এই নতুন হার প্রযোজ্য হবে।
শিশুখাদ্য ও টিস্যুর ওপর কর বৃদ্ধি
বিস্কুট, ফলের রস, ড্রিংক, কেক (৩০০ টাকার বেশি), আচার ও টমেটো সসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, টয়লেট টিস্যু এবং কিচেন টিস্যুর ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এতে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
ওষুধেও ভ্যাট ২.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের সব ব্যবসায়িক লেনদেনের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
সিগারেট ও বিমানের ভ্রমণ ব্যয় বাড়ল
সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করায় সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে।
অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিটে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করা হয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।
ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণের লক্ষ্যে এই শুল্ক ও কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সিপিডি’র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই পদক্ষেপ মধ্যবিত্তসহ নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে।