সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে বিশৃঙ্খলার পেছনে ইন্ধনের প্রসঙ্গ
ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে চলমান নানা বিশৃঙ্খলার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কাজ করছে।
তবে, এই ইন্ধনদাতাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় কিংবা তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি সেনাসদর।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, “তারা কী চায়, সেটা আপনি-আমি সবাই জানি। তাদের উদ্দেশ্য দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা।”
তিনি আরও বলেন, “ইন্ধনদাতারা সবসময় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে সাধারণ জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে এ ধরনের ইন্ধনে প্ররোচিত না হওয়া।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম
গত দুই সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল ইন্তেখাব জানান, ১৩ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
দেশব্যাপী বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ১,৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনাবাহিনী।
এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং রাজনৈতিক কোন্দলের বিভিন্ন ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে একজন অফিসার শহীদ হয়েছেন এবং ১২২ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের সহিংসতা এবং প্রতিরোধ
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সেনাসদরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সনাতন নেতা চিন্ময় দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কাজ করেছে।
বিক্ষোভকারীদের বিপুল উপস্থিতি সত্ত্বেও সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বড় ধরনের সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, “আমাদের সক্রিয়তার কারণেই হয়তো অনেক বড় ঘটনা ঘটেনি।”
তবে তিনি মৃত্যুর ঘটনাকে “বেদনাদায়ক” বলে অভিহিত করেন এবং এ ধরনের ঘটনার প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন।
সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং ইন্ধনদাতাদের পরিচয়
সংবাদ সম্মেলনে ইন্ধনদাতাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল ইন্তেখাব জানান, তাদের সঠিক পরিচয় এখনো নিশ্চিত নয়।
তিনি বলেন, “তাদের আইডেন্টিটি এক্সাক্টলি বলতে পারব না। তবে তারা কী চায়, সেটা স্পষ্ট।”
তিনি আরও যোগ করেন, “একেক জনের একেক ধরনের মোটিভ থাকতে পারে। এর মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা সংগঠনের স্বার্থ থাকতে পারে।”
সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে কোনো ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।
ছাত্র আন্দোলন ও সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি
ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, “ছাত্ররাই দেশের পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি বলেন, “ছাত্রদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে আমাদের খুব চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ছাত্ররা ইন্ধনে প্ররোচিত না হয়ে নিজের দায়িত্ব বোঝার চেষ্টা করবে।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যেকোনো উসকানির বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান
পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানের তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।
গত এপ্রিল থেকে চলমান এই অভিযানে ১৭৯ জন সক্রিয় সদস্য এবং সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযানে ৬০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
আইইডি বিস্ফোরণ এবং অতর্কিত হামলায় এ পর্যন্ত সাতজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, এ ধরনের অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, কিছু সেনাসদস্য শাস্তি পেয়েছে, যার মধ্যে জেল এবং চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত।
তবে তিনি এও উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সর্বদা সতর্ক।